এর আগে একুশের ভোটে বিজেপির ভরাডুবির সাক্ষী থেকেছিল গোটা রাজ্য। মোদী-শাহদের হুঙ্কারের পরেও মাঠে মারা গিয়েছিল তাদের ২০০-র বেশি আসন জয়ের স্বপ্ন। এবার কলকাতা পুরভোটের ফলে স্পষ্ট হয়ে গেল বাংলায় পদ্ম শিবিরের পায়ের তলার মাটি হারানোর ছবিটা। ২০১০ সালে এই রাজ্যে কার্যত ঢাল-তলোয়ারহীন বিজেপি কলকাতায় তিনটি ওয়ার্ড জিতেছিল। মাঝে ২০১৫ সালে তা সাতে উঠেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে এসে ফের সেই তিনেই বিজেপি। শুধু তাই নয়। কলকাতার পুরভোটে বিরোধীদের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছে বামফ্রন্ট। দলগত ভাবেও সিপিএম দ্বিতীয় স্থানে। তিনে বিজেপি। পুরভোটের বিধানসভাভিত্তিক বিশ্লেষণেও দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় স্থানের লড়াইয়ে বিজেপিকে টপকে প্রত্যাবর্তন ঘটল বামেদের।
কলকাতা পুরসভার এলাকার মধ্যে পড়ে মোট ১৭টি বিধানসভা আসন। মূল কলকাতা জেলার ১১টি। বাকি ৬টি দক্ষিণ ২৪ পরগনার। মঙ্গলবার প্রকাশিত পুরভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, ১৭টিতেই বিরোধীদের বহু পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছে শাসকদল তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানের লড়াইতে এগিয়ে বামফ্রন্ট। ১৭টির মধ্যে ৭টিতে দু’নম্বরে বামেরা। এই আসনগুলি হল কাশীপুর-বেলগাছিয়া, শ্যামপুকুর, কসবা, টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বেহালা পূর্ব এবং বেহালা পশ্চিম। এর মধ্যে একমাত্র যাদবপুর আসনে গত বিধানসভা ভোটেও দ্বিতীয় স্থানে ছিল তারা। অন্যদিকে ‘বিজেপি জিতবে, জিতবে কলকাতা’, ব্যানারে শহর মুড়ে ফেলা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র ৬ আসনে।
মানিকতলা, জোড়াসাঁকে, এন্টালি, ভবানীপুর, কলকাতা বন্দর এবং রাসবিহারীতে বাম বা কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে বিজেপি। আট মাস আগের নীলবাড়ির লড়াইয়ে কিন্তু কলকাতা পুর এলাকার ১৭ আসনের মধ্যে ১৬টিতেই দ্বিতীয় স্থানে ছিল তারা। এবার একধাক্কায় তা ১০টি কমে গেল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বামেদের সরিয়ে আসন এবং ভোটপ্রাপ্তি দু’দিক থেকেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। বামেরা লোকসভায় একজনকেও পাঠাতে পারেনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির ধারেকাছে ছিল না বামেরা। বিধানসভার ইতিহাসে প্রথম রাজ্যে একটাও আসন পায়নি বামেরা। কলকাতার পুরভোটে সেই হিসেবটাই ফের বদলে গেল। বামেরা বিজেপির থেকে একটি আসন কম পেলেও ভোট পেয়েছে বেশি। বামেরা ভোট পেয়েছে ১১.৮৭ শতাংশ। যেখানে বিজেপি পেয়েছে ৯.২১ শতাংশ। বামেদের মধ্যে একা সিপিএম-ও বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপির থেকে, ৯.৬৫ শতাংশ।