অতীতে বাংলা দেখেছে, কী ভাবে ক্ষমতা থেকে শূন্যে দিকে এগিয়েছে বামেরা। ঠিক তেমনভাবেই কলকাতা পুরভোটের ফল দেখিয়ে দিল, বিজেপির দিবাস্বপ্নে খানখান হয়ে যাওয়ার ছবিটি। ২০১০ সালের কলকাতা পুরভোটে বিজেপি তিনটি ওয়ার্ডে জিতেছিল। মাঝে ২০১৫ সালে সাতে উঠেছিল তারা। কিন্তু ২০২১ সালে এসে ফের সেই তিনেই বিজেপি। ধরে রাখতে পেরেছে ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। কিন্তু হাতছাড়া হয়েছে ৪২ নম্বর। নতুন এসেছে ৫০ নম্বর। পদ্মবাহিনীর পর্যুদস্ত হয়ে পড়ার ছবি শুধু এটুকুই নয়। কারণ, পুরভোটের সঙ্গে তুলনা করা অনুচিত হলেও গেরুয়াশিবির কলকাতা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরে। তারা হিসেব কষে দেখেছিল, সেই সময় কলকাতার ২২টি ওয়ার্ডে দল এগিয়ে ছিল। তার ভিত্তিতে কলকাতা পুরসভা দখলের স্বপ্নও দেখতে আরম্ভ করেছিলেন গেরুয়াশিবিরের নেতারা। ফলাফল যদিও পুরোপুরি উল্টো কথাই বলেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনেই ২২টি ওয়ার্ড কমে হয়ে যায় ১২। তখনও বিজেপি এগিয়ে ছিল ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার দু’টি ওয়ার্ডে।
এরপর যদিও উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানো ভবানীপুর ওই দুই ওয়ার্ডেও তৃণমূলকে এগিয়ে দেয়। সেই হিসেবেও বিজেপি কলকাতায় ১০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ পুরভোটের ময়দানে পদ্মের জয় এল মাত্র তিনটি আসনে। তিন আসনে জয় পেয়ে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হয়েছে বিজেপির। কারণ, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল এটুকু অন্তত বলতে পারবে যে, আসন পাওয়ার নিরিখে তারা শাসক তৃণমূলের পরেই। যদিও ফারাক অনেক। আর বাম এবং কংগ্রেস দুই-দুই। ২০১৫ সালে বিজেপি কলকাতা পুরভোটে ১৫.৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার সেটা অনেক কমে ৯ শতাংশের আশেপাশে থাকবে বলে শেষ পাওয়া ইঙ্গিত বলছে। শুধু সিপিএমের প্রাপ্ত ভোটের হারই এর চেয়ে খানিকটা বেশি। দিলীপ ঘোষের সভাপতিত্বের সময়ে কোনও পুর নির্বাচন হয়নি কলকাতায়। রাহুল সিংহের সময়েই একবার তিনটি এবং একবার সাতটি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। তুলনায় এখন রাজ্যে অনেক শক্তিশালী তারা। লোকসভায় ১৮ সাংসদ, বিধানসভায় ৭৫ বিধায়ক। কিন্তু সেই আলোর কাছে কলকাতার চার ওয়ার্ডে জয় একেবারেই নিষ্প্রভ।