হাতে আর বেশিদিন বাকি নেই। আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরসভা নির্বাচন। এবং ২১ ডিসেম্বর ভোটের ফল প্রকাশ। আর সেইদিনই রাজনৈতিকভাবে তাঁর শেষ সম্বলটুকুও চিরতরে হাতছাড়া হতে চলেছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের।
প্রসঙ্গত, শ্যাম-কূল সব হারিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অজ্ঞাতবাসে শোভন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন বটে তিনি। কিন্তু সেখানে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। তবে ভোট এলেই নিজেকে সংবাদে আনতে হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আসন্ন কলকাতা পুরভোটের আগে ফের জেগে উঠেছেন তিনি। তবে সংবাদ মাধ্যমে সাময়িক আলোচনায় হাসির খোরাক হলেও রাজনৈতিক মহলে একেবারেই পাত্তা পাচ্ছেন না একদা দিদির প্রিয় ‘কানন’।
বিধায়ক-মন্ত্রী-কাউন্সিলর কিংবা মেয়র হওয়ার পর ঈশ্বরের কাছে মানুষের জন্য কাজ করার শপথ নিয়েও একান্তই ব্যক্তিগত কারণে বেপাত্তা শোভন। যদিও তাঁর রাজনীতিতে থাকা না থাকার কোনও প্রভাবই পড়েনি এই কয়েক বছরে। বরং তাঁর পুরোনো দলের জন্য তা শাপে বর হয়েছে। বিধানসভা ভোটে শোভনের কেন্দ্র বেহালা পূর্ব থেকে রেকর্ড মার্জিনে জিতে বিধায়ক হয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সব আসনেই বড়সড় ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল।
আবার শোভনের একাধিক দফতরের মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার পর নতুন যাঁরা দায়িত্বে এসেছেন, তাঁরা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ সামলাচ্ছেন। তাঁর জায়গায় মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিম দায়িত্ব নেওয়ার পর গত কয়েক বছরে যা কাজ করেছেন, বিশেষ করে করোনা ও আমফানের সময়ের কাজ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে।
শোভন মন্ত্রিত্ব ও মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিধায়ক কিংবা কাউন্সিলর পদ আগলে ছিলেন। তবে ইতিমধ্যেই বিধায়ক পদ চলে গিয়েছে তাঁর। নতুন বিধায়ক পেয়েছে বেহালা পূর্ব। আর ২১ ডিসেম্বরের পর ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর শোভন তাঁর শেষ রাজনৈতিক সম্বলটুকুও হারাতে চলেছেন। সেই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের জয় কার্যত নিশ্চিত।
এই পরিস্থিতিতে তাঁর এক সময়কার ছায়াসঙ্গী, নির্বাচনী এজেন্ট থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সহকর্মীরা কেউ নেই শোভনের পাশে। আসলে তিনি যে জননেতা নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের আলোতেই আলোকিত ছিলেন, সেটা এখন নিজেও বুঝতে পারছেন শোভন। তা না হলে অন্তত নির্দল প্রার্থী হয়ে বিধানসভা অথবা পুরসভা ভোটে লড়তে পারতেন। কিন্তু শোভন হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন, তিনি যেখানেই দাঁড়াবেন গো-হারা হারবেন। আর তাই নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে হতাশায় ভুগছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।