হাতে আর বেশিদিন বাকি নেই। আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতার পুরভোট। কিন্তু এখনও সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ মাধ্যমে নেই সেই অর্থে ভোটের উত্তাপ। নেই পাড়ায় পাড়ায় দেওয়াল লেখা নিয়ে রেষারেষি, অলিগলিতে দু-হাত অন্তর পথসভা বা মাইকে কান ফাটানো চিৎকার। এ হেন দৃশ্য দেখে অনেকেই বলছেন, কলকাতায় এমন নিস্তরঙ্গ পুরভোট দেখিনি। আসলে সদ্য বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর শাসক দলের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলাটাই বিরোধী শিবিরের প্রধান কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীরা পাল্টা চ্যালেঞ্জে যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অপ্রত্যাশীত বিপুল জয়, বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদির ফলে গোটা বিরোধী শিবিরকেই রাজনৈতিক হতাশা গ্রাস করেছে। তারা কর্মী-সমর্থকদের পথে নামাতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই আশাবাদী নির্বাচনী ফলাফলে কলকাতা ইতিহাস স্থাপন করতে চলেছে। এবার ১৪৪টি আসনেই জয় পাবে দল। ফলাফল নিয়ে এমন চর্চা, জল্পনার মধ্যেই আজ বুধবার প্রচারে নামছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তাঁর প্রথম সভা ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনের সামনে। এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী আরও দুটি সভা করবেন। প্রথমটি যাদবপুরে বারো ভূতের মাঠে। দ্বিতীয়টি বেহালা চৌরাস্তায়।
জোড়া ফুল শিবিরের এক নেতার কথায়, আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবার প্রার্থী চূড়ান্ত করার দিনেই বলে দিয়েছেন, ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করা আমাদের কর্তব্য। কারণ, আমরা সরকারে আছি। তাছাড়া, বিধানসভা ভোটে কার্যত মিলিটারি নামিয়ে ভোট হয়েছে। তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তৃণমূলের জন্য জনপ্রিয় ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। কলকাতার পুরভোট তার ব্যতিক্রম হবে কী ভাবে? তিনি বলেন, ছ’মাস আগে শহরের সব ক’টি বিধানসভা তৃণমূল দখল করেছে। সেই কারণে তৃণমূলই সংযমের পরিচয় দেওয়ায় অশান্তির ঘটনা নেই।
সসম্প্রতি কামারহাটির বিধায়ক তথা প্রবীণ তৃণমূল নেতা মদন মিত্রর একটি কথা শাসক থেকে বিরোধী সব শিবিরকেই মনে মনে নাড়িয়ে দিয়েছে। ‘কাঁচা বাদাম’ গান খ্যাত ভূবন বাদ্যকরকে ১৪৪ কেজি কাঁচা বাদাম সরবরাহের বরাত দিয়ে তাঁর ঘোষণা, ২১ ডিসেম্বর ফল প্রকাশের পর তিনি ওয়ার্ড পিছু এক কেজি করে কাঁচা বাদাম বিলি করবেন। অর্থাৎ ১৪৪ ওয়ার্ডই তৃণমূল জয় পাবে বলে দাবি মদনের। রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পর শাসক ও বিরোধী, দুই শিবিরের অনেকেই একান্তে বলছেন, ‘হলেও হতে পারে। অসম্ভব কিছু নয়।’ লক্ষ্যনীয় হল, বিরোধী শিবিরে কেউ এমনকী প্রকাশ্যেও জোর দিয়ে বলছেন না, এমন ফল অসম্ভব।