২০১৮ সালে টানাপড়েনের মধ্যে হঠাতই পদত্যাগ করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর তারপরই কলকাতার মেয়রের দায়িত্ব নেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি তখন কাউন্সিলর না থাকায় পুর আইনে বদলও আনে রাজ্য। দলের দেওয়া গুরুদায়িত্ব যথাযথ ভাবেই পালন করেছেন তিনি৷ সামনেই পুরভোট কলকাতায়। আর তার আগে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফিরহাদ বলেন, আমি তো এই চেয়ারে আচমকা এসে পড়লাম। একটা করে বসল। আমি তখন নবান্নে। অনেকের মতোই খবরটা পেয়েছি। সাত-পাঁচ ভাবনার মধ্যে হঠাৎ মমতাদি ঘরে ডাকলেন। বললেন, ‘ববি, শুনেছিস তো! তোকে দায়িত্ব নিতে হবে।’ একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কাউন্সিলর আমি অনেক আগে থেকে। মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান— এ সব কাজও দেখেছি, করেছি। কিন্তু ঐতিহাসিক এই শহরের গোটা পরিষেবা-প্রশাসনের কথা ভেবে ভয় হচ্ছিল। তাই গোড়া থেকেই সতর্ক ছিলাম। যেখানে যা জানতাম না বা বুঝতাম না, সেখানে সশরীরে পৌঁছে যেতাম। দাঁড়িয়ে দেখতাম সব।
তিনি আরও বলেন, কলকাতায় কাজ তো অনেক হয়েছে। আগে তো বটেই, পরেও বাম ও তৃণমূল পুরবোর্ডের আমলে যে কাজ শুরু হয়েছিল, তা এগিয়েছে। তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আর মমতাদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্য সরকারের বহু প্রকল্প সরাসরি পুর পরিষেবারই অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বিল্ডিং বিভাগের বেআইনি বাড়িকে আইনি করার ব্যবস্থাটা তুলে দিই। ওই কাজের জন্য ডিজি-২ পদটার কোনও দরকারই ছিল না। তাতে কিছুটা কাজ হয়েছে। ফিরহাদ জানান, আরও একটা কাজ জরুরি ছিল। কাউন্সিলরকে যেমন ওয়ার্ডের মানুষ সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, ভেবেছিলাম, মেয়রের ক্ষেত্রেও তেমন একটা চেষ্টা করা যায়। শুরু করেছি। ফোনে ব্যবস্থা হয়েছে। ‘টক টু মেয়র’ চলছে। অনেকেই ফোন করছেন। অভাব, অভিযোগ জানাচ্ছেন।
ফিরহাদের কথায়, আমার মেয়াদকালে করোনা অতিমারি এবং তার জন্য হওয়া লকডাউনের মোকাবিলা করতে হয়েছে মানুষকে। কোনও ধারণাই ছিল না এমন পরিস্থিতি নিয়ে। মনে পড়ে, এক সময়ে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছিল। হাসপাতালে, বাড়িতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্মশানগুলিতে সৎকারের কাজে বাধা আসতে থাকায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হল। দেখলাম, মমতাদিও নেমে পড়েছেন। মানুষকে সাহস ও পরামর্শ দিতে ঘুরছেন। আমিও নামলাম। শ্মশানে শ্মশানে গিয়ে কথা বলে, বুঝিয়ে বাধা কাটানো গেল। ধাপাতেও পরিকাঠামো বাড়ানো হল। আতঙ্কে বসে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্স ও শববাহী গাড়ির চালকদের আবার স্টিয়ারিংয়ে তোলা হল। এরই মধ্যে ‘নাইসেড’ আমার কাছে জানতে চাইল, এ শহরে করোনার প্রথম প্রতিষেধক নিতে আমি রাজি কি না। ভেবেছিলাম, এটা একটা সুযোগ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আমি নিলে ভয় কাটিয়ে আরও মানুষ প্রতিষেধক নেবেন। কাউকে কিছু না বলেই রাজি হয়ে গেলাম। প্রতিষেধক নিলাম। বাড়িতে জানল, টিভি দেখে। মমতাদিকেও বলিনি। পরে প্রতিষেধকের লাইনে ভিড় দেখে তৃপ্তি পেয়েছি।