রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছেন, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে গেলে তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক আমানতকারীকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এরপরেই প্রশ্ন উঠেছে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের দিকে কি দ্রুত এগোতে চাইছে কেন্দ্র? নাকি আর্থিক মন্দার মুখে বহু শিল্পপতির কাছে থাকা অনাদায়ী ঋণের বোঝায় বিপর্যস্ত ব্যাংকিং শিল্প ঘিরে যে আশঙ্কার মেঘ জমেছে, তা ঘিরে আরও অন্ধকার নেমে আসার ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী?
প্রসঙ্গত, গত আগস্টে কেন্দ্রের মোদী সরকার আমানত বিমা সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে। সেই সংশোধনী বলছে, ব্যাংক দেউলিয়া হলে এক লক্ষ টাকার জায়গায় ৫ লক্ষ টাকা ফেরত পাবেন। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, আমানত বিমা বাড়িয়ে সরকার প্রকৃতপক্ষে ব্যাঙ্ক আমানতের ঝুঁকির সম্ভাবনাতেই সিলমোহর দিয়েছে। মোদীর ঘোষণায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্মী সংগঠন সরব। তাদের মতে কেন্দ্র সাধারণ মানুষের সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আমানতও আর নিরাপদ নয়। উদ্বিগ্ন গ্রাহকরা। সেই উদ্বেগ ধরা পড়েছে সারাদিনের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও।
উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাইয়ের আগে পর্যন্ত দেশে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ছিল শোচনীয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে উঠে যাচ্ছে। গ্রাহকের আমানত উধাও। যাঁরা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা রাতারাতি সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসছেন। সেই সময় ব্যাংক জাতীয়করণ পুরো অর্থনীতিটাকেই পালটে দিয়েছিল। সারা দেশের মোট ব্যাঙ্ক আমানতের ৮৫ শতাংশ সরকারি সুরক্ষা পেয়ে যায়। আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সময় ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমা স্থির হয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোর জন্য।
মনে রাখতে, হবে সেই সময়ের বাজারদর অনুযায়ী ১ লক্ষ টাকা ছিল বিপুল অর্থ। যা খুব সামান্য সংখ্যক মানুষেরই ব্যাঙ্কে গচ্ছিত থাকত। বর্তমানে শতাংশের হিসাবে যে ১০ শতাংশ গ্রাহকের পাঁচ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে ব্যাঙ্ক আমানত রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটা খুব কম নয়। উদ্বেগের বিষয়, পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি জমা অর্থ ফেরতের জন্য গ্রাহক কোনও আইনি সুরক্ষা পাচ্ছেন না। তাছাড়া অর্থনীতিবিদদের মতে এতে ব্যাঙ্কের পরিবর্তে অন্য ক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণ বাড়বে। বেড়ে যাবে ঝুঁকির বিনিয়োগ। আবার সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ধাতুর উপর কালো টাকা বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের মোদী সরকারের ‘আর্থিক সংস্কারে’র অন্যতম লক্ষ্য ব্যাঙ্ক বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা। পরবর্তী লক্ষ্য ব্যাঙ্ক, বিমা-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গা থেকে ‘সরকারি’ তকমাটি দ্রুত মুছে ফেলা। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ডিপোজিট ইনসিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন আইন সংশোধন। যার প্রচারে নেমেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে আগ বাড়িয়ে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে টাকা ফেরতের গ্যারান্টি দিতে দেখা যায়নি। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে ব্যাঙ্কের লাটে ওঠাই নিশ্চয়তা পাচ্ছে।