দেশজুড়ে তোলপাড় করা পেগাসাস স্পাইওয়ার কাণ্ডে সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে চায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন। ইতিমধ্যে সন্দীপ সেনগুপ্ত নামে এক বিশেষজ্ঞকে শুনানিতে ডেকেছে কমিশন। মোবাইল হ্যাকিং সংক্রান্ত তাঁর অভিমত গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন ভীমরাও লোকুর এবং কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের তদন্ত কমিশন। নিউটাউনের পুরনো এনকেডিএ বিল্ডিংয়ে গত ২৯শে নভেম্বর থেকে শুনানি শুরু করেছে ওই কমিশন। ইতিমধ্যে পাঁচজনের শুনানি হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ফের শুনানি শুরু হতে পারে। তবে রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর, রাকেশ আস্থানা, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা সহ ২৪-২৫ জনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কেউই এখনও পর্যন্ত শুনানিতে যোগ দেননি। একমাত্র অভিষেকের আপ্ত সহায়ক সুমিত রায় পারিবারিক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, ১০ই ডিসেম্বরের পরে যাবেন বলে বিচারবিভাগীয় কমিশন সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেগাসাস কাণ্ড সামনে আসার পর বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন তৈরি করেন। গত ২৬শে জুলাই এই কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ২রা আগস্ট কমিশনের দুই সদস্যের নাম বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। ৪ঠা আগস্ট সংবাদপত্রে আবেদন করার জন্য বিজ্ঞাপন করা হয়। ২৪শে আগস্ট ওয়েবসাইট খোলা হয় এবং প্রথম নোটিস হয়। ঠিক হয়, ‘দি ওয়ার’ পোর্টালে যাদের মোবাইলে আড়িপাতা হয়েছে বলে নাম প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদেরই নোটিশ করা হবে। এখনও পর্যন্ত ৪০টি আবেদন জমা পড়েছে। কিছু আবেদন ৪০০, ৬০০, ৮৫০ পাতার। যা পড়ে নোটিশ তৈরি করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে কমিশনের অফিসারদের। ৪০টি আবেদনের মধ্যে থেকে শর্ট লিস্ট তৈরি করা হয়। অনলাইন ও অফলাইনে শুনানি করার জন্য নোটিশ পাঠানো শুরু হয়। ১০ই নভেম্বর রাহুল গান্ধীকে, ১২ই নভেম্বর প্রশান্ত কিশোর, ১৬ই নভেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাঠানো হয়েছে হায়দ্রাবাদের পুলিশ কমিশনারকেও।
এরপর রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে নোটিশ পাঠায় কমিশন। মুখ্যসচিব অবশ্য তাঁর জবাব পাঠিয়ে দিয়েছেন। আরও বিশদে জানতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন্স ল্যাবকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। কমিশন অপেক্ষা করছে ওই ল্যারের রিপোর্টের জন্য। বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন প্রাথমিকভাবে নোটিশ পাঠিয়ে অভিযোগকারী ও সাক্ষ্যগ্রহণকারীর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করতে চায়, সেই সঙ্গে হ্যাকিং-সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে তদন্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান বিচারপতিরা। মূলত প্রযুক্তিগত দিকটা খুঁজে বের করাই দুই বিচারপতির অন্যতম কাজ। পেগাসাস স্পাইওয়ার ‘জিরো ক্লিকে’ মোবাইলে ঢুকতে পারে, এই বিষয়টি কী করে সম্ভব, তার প্রযুক্তিগত দিক খতিয়ে দেখছে কমিশন। তার জন্য সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চলেছে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন।