আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি ও কলকাতা পুরসভা নির্বাচন। পাশাপাশি ‘জাওয়াদ’ ঘূর্ণিঝড়ের জেরে দুর্যোগ মোকাবিলা। সঙ্গে বাড়তি হিসেবে আছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ আর জেলার হাজার হাজার বাসিন্দার করোনা টিকাকরণ। একসঙ্গে এই বিরাট কর্মযজ্ঞের দায়ভার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাঁধে চাপায় কার্যত শ্বাস ফেলারও সময় নেই। তিন মূল মহাদায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালনের জন্য আলাদা আলাদা আস্ত তিনটি ‘ওয়ার রুম’ বা ‘যুদ্ধ শিবির’ খোলা হয়েছে আলিপুরে জেলার সদর দপ্তরে। তার একটিতে চলছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলানোর তৎপরতা। পুরসভা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্ম হচ্ছে দ্বিতীয় শিবিরে। তৃতীয় শিবিরে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতির ব্যস্ততা। সেই সঙ্গে চলছে টিকাকরণ ও ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজও।
ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং বিডিওদের নিয়ে তিনটি পৃথক দল গড়া হয়েছে। অন্যান্য কাজ থেকে আপাতত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ওই তিন দলের সদস্যদের। আগামী ডিসেম্বরের শুরুতেই গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনে জেলা প্রশাসনের ব্যস্ততা তুঙ্গে। গত বছরের মতো এবারেও কেন্দ্র ও রাজ্যের করোনা বিধি মেনে সাগরমেলা আয়োজিত হবে। জানুয়ারির প্রথমে মেলার উদ্বোধনের আগেই মুড়িগঙ্গা নদীর ড্রেজিং, লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর জন্য ছাউনি তৈরি এবং পরিবহণ ব্যবস্থা-সহ সব পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, তারও আগে রয়েছে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। এই মহাভোট রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে হলেও মূল দায়িত্ব পালন করতে হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকেই। মনোনয়ন, ভোট, গণনা, সব কাজই হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দপ্তরের অধীনে। ওই জেলাশাসকই কলকাতা পুরসভার নির্বাচনী আধিকারিক। এরই মধ্যে জাওয়াদের জেরে বাঁধ ভেঙে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে চলছে জলোচ্ছ্বাস। সেখানকার বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া, ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন সকাল থেকে সন্ধ্যা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনও ঘটনাস্থলে গিয়ে অফিসারদের সঙ্গে ঘুরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র অনুযায়ী, কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবার মহকুমা অফিসারদের নেতৃত্বে একটি দল শুধু গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতির দায়িত্বে রয়েছে। আলিপুর সদর, বারুইপুর মহকুমার অফিসারদের দায়িত্বে রয়েছে পুরভোট। জেলার বিভিন্ন দপ্তর থেকে ৫০০ জন অফিসার নেওয়া হয়েছে। বাতিল হয়েছে সব ছুটি। জেলাশাসক বলেন, “ডিসেম্বরে কলকাতা পুরসভা নির্বাচন হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। তাই গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরেই শুরু করে দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি জারি হলে কী ভাবে মেলার প্রস্তুতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুরসভা নির্বাচন সংগঠিত করতে হবে, তারও একটা আগাম পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কোন কোন অফিসার ঠিক কোন কোন দায়িত্বে থাকবেন, তাও ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল আগেই।”
পাশাপাশি, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছে একটি নির্দিষ্ট দল। টিকা যেমন দেওয়া হচ্ছিল, তেমনই দেওয়া হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাইরে শুধু কলকাতা পুরসভার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের দপ্তর থেকে কিছু কর্মী ও অফিসারকে ভোট পরিচালনা করার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে উলগানাথন বলেন, “অতিরিক্ত জেলাশাসক থেকে একেবারে নিম্ন স্তরের কর্মী-অফিসারেরা একটা দল হিসেবে কাজ করছেন। সুষ্ঠু ভাবে সব সম্পন্ন করতে হবে বলে যেন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। নিজেরাই ছুটি বাতিল করেছেন।” ডিএম দপ্তরের এক কর্মী জানান, “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলাশাসক কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে একই ভাবে চলছি আমরাও।”