নাগাল্যান্ডের মন জেলার বাসিন্দা ছিল দুই যমজ ভাই লাংওয়াং ও থাপওয়াং। তারা তিন বছর ধরে স্থানীয় এক কয়লাখনিতে কাজ করত। মন জেলারই এক বাসিন্দা ওই খনির মালিক। গত ১৫ বছর ধরে ওই খনি অনেকের জীবিকা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। সারা সপ্তাহ খনিতে কাজ করে লাংওয়াং ও থাপওয়াং শনিবার বাড়ি ফিরত। গত শনিবার গ্রামে ফেরার পথে অসম রাইফেলসের গুলিতে তারা নিহত হয়। তাদের বাবা বলেছেন, ক্ষতিপূরণ হিসাবে কিছু টাকা দিলেই ন্যায়বিচার করা হয় না। আমি চাই, সেনাবাহিনীর যে অফিসাররা আমার ছেলেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি হোক।
গত সপ্তাহে হোকআপ নামে এক খনি শ্রমিকের বিবাহ হয়েছিল। তাতে নিমন্ত্রিত হয়েছিল লাং ওয়াং ও থাপওয়াং। হোকআপও অসম রাইফেলসের গুলিতে মারা গিয়েছেন। এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, যেখানে হোকআপের বিয়ের মণ্ডপ তৈরি হয়েছিল, সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় নিহত ছয় খনিশ্রমিক ও আরও সাতজন সাধারণ মানুষের দেহ হাসাহাপাং গ্রামে আনা হয়। সেখানেই সমাহিত করা হয় ১৩ জনকে। গ্রামে টাঙানো হয়েছিল একটি ব্যানার। তাতে লেখা ছিল, ‘স্বাগত ভাইরা’।
যে ট্রাকটি লক্ষ্য করে অসম রাইফেলস গুলি চালায়, সেটি চালাচ্ছিলেন সোমওয়াং কোনয়াক (৩৩)। তিনিও গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাঁর বাবা চেমওয়াং কোনওয়াক বলেন, ‘আমরা চাই, যে মেজর ওই অপারেশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তাঁকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হোক’। চেমওয়াং-এর ভাইঝি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর কাজ আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তারা আমাদের ঘরের ছেলেদেরই খুন করছে’।
রবিবার ভোরে মায়ানমার সীমান্তে, নাগাল্যান্ডের মন জেলায় জঙ্গিদমন অভিযানে গিয়েছিল অসম রাইফেলস। তাদের কাছে খবর ছিল, সেখানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি জড়ো হয়েছে। তাদের আক্রমণের জন্য রাস্তায় ফাঁদ পাতে সেনাবাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ভুল করে নিরীহ গ্রামবাসীদের জঙ্গি ভেবেছিল। সেজন্য বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সেনা জওয়ানদের ঘেরাও করেন। সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি চালায়। তখনই ১৩ জন গ্রামবাসী নিহত হন। জনতা সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এর পরে সন্ধ্যায় আরও এক গ্রামবাসীর প্রাণ যায়।