নাগাল্যান্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। মারা গিয়েছেন একজন সেনা জওয়ানও। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৫। আহত বহু। এ নিয়ে বিব্রত কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক এবং বেসামরিক গোয়েন্দা রিপোর্টকেই প্রাথমিকভাবে কাঠগড়ায় তুলছে।
সরকারি সূত্রে আগেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে জঙ্গী সন্দেহে অভিযান চালায় সেনা। শনিবারের অভিযান নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর সরকারি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই। আর্মির একটি বিশেষ ইউনিটকে এজন্য প্রস্তুত করে মন জেলার ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছিল।
গুলি ছোঁড়ার আগে সেনারা গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে দেখে নেয়। জঙ্গী তৎপরতা ও যাতায়াতের ব্যাপারে গোয়েন্দা রিপোর্টে যে বর্ণনা ছিল তার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় অভিযানে নিহতদের সংখ্যা এবং ঘটনার সময়কার পরিস্থিতির সঙ্গে। ফলে ভুল অভিযানে মারা যান নিহতরা।
কেন এতটা ভুল তথ্য সেনার কাছে এল, তা নিয়েও এখন জোর ময়না তদন্ত শুরু হয়েছে। সেনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি ঘন জঙ্গল ঘেরা এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে এমন ভ্রান্ত রিপোর্ট নতুন নয়। তবে এই বাস্তব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই সেনা গোয়েন্দাদের কাজ করতে হয়।
ওই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার ভুল অভিযানের মিল দেখতে পাচ্ছেন। সেনা অভিযান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এমন অনেক ভুল তথ্যভিত্তিক অভিযানের কারণেই আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার হাতে নিরীহ নাগরিক মারা গিয়েছে। কাশ্মীরেও এমন অভিযানের নজির আছে।
নাগাল্যান্ডের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর কাছে খবর ছিল, মন জেলার ওটিং-থিরু রোড ধরে ট্রাকে চেপে নিষিদ্ধ সংগঠন এনএসসিএম (কে)-র উং আং গোষ্ঠীর জঙ্গিরা মায়ানমারের দিকে যাবে। সেই তথ্যেই ভুল ছিল বসে সেনা কর্তারা এখন বুঝতে পারছেন।
সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে খনি শ্রমিক বোঝাই ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি চালায় সেনা। তখনই মারা যান ছয় শ্রমিক। ওই ঘটনার প্রতিবাদে জনতা সামরিক ক্যাম্পে হামলা চালায়। সেনা ছাউনিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সেনা মুখপাত্রের বক্তব্য, দীর্ঘ সময় ধরে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চেলে গেলে আত্মরক্ষার্থে সেনা গুলি চালালে সাতজন গ্রামবাসী মারা যায়। মারা যায় একজন সেনা জওয়ানও। বেশ কয়েকজন আহত হয়। রবিবার ফের গ্রামবাসীরা অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে হামলা চালালে আরও এক গ্রামবাসী নিহত হয়।
সেনার একটি সূত্রের বক্তব্য, গত মাসে মণিপুরে সপরিবারের কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠী, তাঁর স্ত্রী ও পুত্র এবং চার সেনা জওয়ান জঙ্গিদের আক্রমণে নিহত হন। ওই ঘটনার পর থেকেই উত্তর-পূর্ব সেনা নজরদারি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। মন জেলায় জঙ্গী কার্যকলাপ নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়া মাত্রা সেনার সংশ্লিষ্ট ইউনিট তৎপর হয়ে ওঠে।
ওই ঘটনা নিয়ে সামরিক ও বেসামরিক দু-তরফেই তদন্ত শুরু হয়েছে। নাগাল্যান্ড সরকার স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছে। অন্যদিকে, সামরিক আইন মেনে গড়া তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে হবে অভিযানে অংশ নেওয়া সেনা এবং নেতৃত্বদানকারী অফিসারদের। তবে ভুল গোয়েন্দা তথ্যই সেনাকে সবচেয়ে ভাবিয়ে তুলেছে।