কলকাতায় শীতের হাতছানির মধ্যেই পুরভোটের উত্তাপে চড়তে শুরু করেছে রাজনীতির পারদ। দীর্ঘ অতিমারীকাল অতিক্রম করে, আগামী ১৯শে ডিসেম্বর হতে চলেছে কলকাতা পুরনির্বাচন। তৃণমূল কংগ্রেস পুরসভার ১৪৪ টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিজেপিও সবকটি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এবারের পুরভোটে চতুর্মুখী লড়াই দেখতে চলেছে কলকাতা। কারণ ইতিমধ্যেই ভেঙে গিয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৈরি হওয়া বাম-কংগ্রেস জোট। আলাদা আলাদা করে কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাম ও কংগ্রেস শিবির। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি শক্তি পাবে জোড়াফুল শিবির, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। বাম ও কংগ্রেসের এই পৃথকভাবে নির্বাচনে লড়া, কলকাতায় তৃণমূলের ভোটকে আরও সুসংবদ্ধ করবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বিগত এক দশক ধরে কলকাতা পুরসভা নিজেদের দখলে রেখেছে তৃণমূল। শেষ দুবারের কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেসদের কেবল শক্তি ক্ষয় হয়েছে, সেখানেই কিঞ্চিৎ সুবিধা করতে পেরেছে গেরুয়াশিবির। পুরনির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যু, প্রার্থী ও রাজ্যের শাসক দল; সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। যা এবারের পুরভোটে তৃণমূলের অনুকূলে রয়েছে। বিদায়ী পুরবোর্ডের ১৪৪ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলেই ছিল ১২৬ টি ওয়ার্ড। বাকি ১৮ টি আসন ছিল বিরোধীদের দখলে। এই বিরোধীরাই এবার নিজেদের মধ্যে লড়তে ব্যস্ত।
এপ্রসঙ্গে সেন্টার ফর স্টাডিজ সোশ্যাল সায়েন্স, কলকাতার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মঈদুল ইসলামের কথায়, “বাম-কংগ্রেস জোট আদৌ হচ্ছে কিনা তা তৃণমূলের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু এবারের পুরভোটে চতুর্মুখী লড়াইয়ের ফলে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পাবে। জোট ভেঙে যাওয়ায় তৃণমূলের আরও বেশি সিট পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বাম-কংগ্রেস জোট হলেও তৃণমূল বড় ব্যবধানেই জয় পেত।” জোট ভেঙে যাওয়া বিজেপিকে আদৌ বাড়তি কোনও অক্সিজেন যোগাবে কিনা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মঈদুল আরও যোগ করেন, “বিজেপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেরাই সংশয়ে রয়েছে। অন্তর্কলহ রয়েছে তাদের দলে। যদিও কলকাতায় বিজেপির দু-একটি পকেট ভোট রয়েছে। কলকাতায় বিজেপির বর্তমান পরিস্থিত ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ পর্যায়ে রয়েছে।”
পাশাপাশি আর এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ শিখা মুখোপাধ্যায় পর্যবেক্ষণ, বাম ও কংগ্রেস দলীয় ভাবে উপলব্ধি করেছে, জোট হলে তাদের ভোটাররা নিজেদের অপর জোটসঙ্গী জোট দেন না। শিখা দেবী বলেন, “বাম ও কংগ্রেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটাররা তাদের নিজেদের দলের প্রতি অনুগত। তারা জোটসঙ্গীদের মধ্যেও ভোট অদল বদল করেন না। জোট হলেই যে এক দলের সমর্থক অন্য জোটসঙ্গী দলকে ভোট দেবেন তা নিশ্চিত নয়।” এখন দেখার, কী ফল হয় কলকাতা পুরভোটে। বাম-কংগ্রেস জোট ভেঙে যাওয়ার সুফল কারা পেল, তা জানা যাবে আগামী ২১শে ডিসেম্বর।