কোভিড সংক্রমণের জেরে দেশজুড়ে গভীর সংকটের সামনে শিক্ষাব্যবস্থা। আট মাসের বেশি বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। আবার সেগুলি খুললেও সেখানে স্বাভাবিকভাবে পঠনপাঠন চালু করা যাবে কিনা, তা অনিশ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনলাইন শিক্ষার সুপারিশ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে অনলাইন ক্লাস চললেও তা কখনও শ্রেণীকক্ষে প্রথাগত শিক্ষার বিকল্প হতে পারে না। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ডিজিটাল শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে রাজ্য শিক্ষাদপ্তর।
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার এবং ভারতের অন্যতম এডুকেশন টেকনোলজি সার্ভিস প্রোভাইডার স্কুলনেট এদিন শিক্ষার উন্নয়ন-কল্পে চুক্তিবদ্ধ হয়। গভর্মেন্টের সহযোগিতায় গোটা রাজ্যে সকল সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলে ডিজিটাল লার্নিং এবং কেরিয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করা হবে। আশা করা হচ্ছে এই উদ্যোগের ফলে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পার্সোনালাইজড লার্নিং সল্যুশন পৌঁছে দেওয়া সহজতর হবে। রাজ্য সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ‘বাংলার শিক্ষা’, এতে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘Geneo eSekha’ নামের একটি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম খোলা হয়েছে। এই পোর্টালটি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে মাতৃভাষায় শিক্ষাবিষয়ক সামগ্রী প্রদান করবে। এটি ‘Geneo’-এর বিশেষ বাংলা-ভাষা সংস্করণ। স্কুলনেট গোটা ভারতবর্ষে অন্যতম পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান যারা বৈদ্যুতিন শিক্ষাব্যবস্থাকে সহজ-সরল, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকরী করতে উদ্যোগী।
প্রসঙ্গত, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বতঃস্ফূর্ত শিক্ষা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ‘Geneo eSekha’ কে তাই বাংলার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্ষদের পাঠ্যসূচীর কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। এই ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্মটি পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত গণিত, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি পড়াবে। নবম এবং দশম শ্রেণীর জন্য পড়ানো হবে ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান ইতিহাস এবং ভূগোল। বাংলার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যবইগুলি এতে ডিজিটাল ফরম্যাটে পাওয়া যাবে যা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্কুল শিক্ষার পুনর্পাঠে সাহয়তা করবে। পাশাপাশি, ‘Geneo eSekha’-এর মৌলিক বিশেষত্ব হল যে এটি মাল্টি মোডাল অর্থাৎ পড়ুয়াদের সর্বাঙ্গীণ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন সুবিধাজনক বিকল্পের ব্যবস্থা রেখেছে। যেমন সিস্টেমের রেকমেন্ডেশন অনুযায়ী ইয়ুজারকে গাইডেড লার্নিং দেয়। এমনকী অফলাইন অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীর গতিবিধি নজরে রাখা যায়। পড়াশুনার প্রতিটি ধাপেই ছাত্ররা বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারে। এরই পাশাপাশি কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে সেটিকে ফের স্পষ্টভাবে ঝালিয়ে নেবার ব্যবস্থাও রয়েছে। যা তাদের জ্ঞানের পরিসরকে বিস্তৃত করবে। এছাড়াও সেলফ অ্যাসেসমেন্ট, রিভিশন এবং পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ‘CareerPath’ নামের একটি বিশেষ গাইডেন্স এবং কাউন্সেলিং সলিউশন দেবে ‘বাংলার শিক্ষা’। এটি অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরদের জন্যই উপলব্ধ। ২০২০ সালের নয়া শিক্ষানীতি অনুযায়ী ‘CareerPath’ পেশাগত এবং শিক্ষাগত কাউন্সেলিং-এর সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেবে সব স্কুলপড়ুয়াদের কাছে। ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বেশকিছু কাউন্সিলর নিয়োজিত থাকবে। অডিও-ভিসুয়াল মাধ্যমের সাহায্যে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রিটিকাল থিংকিং এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে ‘Geneo eSekha’ ফলপ্রসূ হবে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেকাংশে উপভোগ্য করে তুলবে বলে আশা করছে বিশেষজ্ঞ মহল।