পুরভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার দলের হয়ে কারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, আজই সেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে পারে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি নজর দেওয়া হবে যুব ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের। একাধিক ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল হতে পারে। একাধিক প্রার্থীকে দল টিকিট না-ও দিতে পারে। একই পরিবারের একাধিক জন ব্যক্তি টিকিট না-ও পেতে পারেন৷ এর পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হবে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টকেও।
দলীয় সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে সংরক্ষণের আওতায় পড়ে নিজের ৩০ ওয়ার্ড ছেড়ে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। এবার ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষণের আওতায় পড়ে গিয়েছে। তাই তাঁকে পাঠানো হতে পারে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন প্রভাবশালী কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। এদিকে, এবারই প্রথম বিধায়ক হওয়ায় কলকাতার তিন কাউন্সিলর অতীন ঘোষ, দেবাশিষ কুমার ও দেবব্রত মজুমদারকে ফের প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনায় রয়েছে দল। কারণ এই ক্ষেত্রে দলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ নীতি’ রক্ষিত হচ্ছে না একার্থে।
বর্তমান পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য রতন দে-র ওয়ার্ড বদলের সম্ভাবনা প্রবল। তিনি বর্তমানে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর। ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার কারণে তাঁকে পাঠানো হতে পারে ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমতা মজুমদারকে টিকিট না-ও দেওয়া হতে পারে। ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তথা পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা ভবানীপুর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে পাঠানো হতে পারে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি-র কারণে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তথা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়কে দল সম্ভবত প্রার্থী করবে না। একই ভাবে নজরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য সুশান্ত ঘোষ-এর ১০৭ নম্বর ওয়ার্ড এ বার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। তাই পাশের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন তিনি। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস নিজের ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারছেন না। তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষণের কারণে তাঁকেও পাশের কোনও ওয়ার্ডে পাঠানো হতে পারে।
কলকাতা বন্দরের ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর নিজামুদ্দিন শামসকে পাঠানো হতে পারে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে। আবার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা যুবনেতা অরূপ চক্রবর্তীর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার কারণে তিনি প্রার্থী হতে পারেন ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে। মহিলা সংরক্ষণের কারণে ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর ঘনশ্রী বাগকে ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আনা হতে পারে। ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে পারেন জাভেদ খান-পুত্র ফৈয়াজ আহমেদ খান।
জানা গিয়েছে, ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুত্র সৌরভ বসু। ১২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন অভিনেতা তথা তৃণমূলে যুবনেতা অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ৭৩ ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন রতন মালাকার। বর্তমানে ১১৬, ১১৭ ও ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর রয়েছেন একই পরিবারের পিতা-পুত্র-কন্যা। এখানেও প্রার্থী তালিকায় কাটছাঁট হতে পারেন। তবে সকলের নজরে রয়েছে ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। যেখান থেকে জিতেই মেয়র হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি মেনে তাঁকে প্রার্থী করা না হলে কলকাতার আগামী মেয়র কে হতে পারেন, তা নয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।