নৃশংস ও হৃদয়বিদারক নানা ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। উত্তর ভারতের একাধিক জায়গায় কন্যা জন্মানোর পরই মায়ের স্তন্যপান করতে চাইলে বুকে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কোথাও আবার ছোট্ট মেয়েটিকে ঘুমের মধ্যেই বিছানা থেকে তুলে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। কন্যাসন্তানকে বাঁচতে না-দেওয়ার এমন ভয়াবহ অভ্যেসের পাশাপাশি ক্রমেই উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে উঠছে একদা নবজাগরণের দিশারী বাংলা। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্প। মোদী সরকারের সদ্য প্রকাশিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভিস ৫-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, দেশে প্রতি ১০০০ পুত্রসন্তান প্রসবের তুলনায় কন্যাসন্তান প্রসবে বড় রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলা। পুত্রসন্তানে কন্যাসন্তান জন্মের হার ৯৭৩। আর গ্রামীণ এলাকায় এই একই হারে বড় রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলা। বাংলার গ্রামে প্রতি হাজার পুত্রসন্তান প্রসবের তুলনায় কন্যাসন্তান প্রসবের হার ৯৯৩। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কেরল ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলা।
প্রসঙ্গত, গ্রাম-শহর মিলিয়ে এই ক্ষেত্রে বড় রাজ্যগুলির মধ্যে বাংলার থেকে শুধুমাত্র এগিয়ে কর্ণাটক। সেখানে প্রতি ১০০০ পুত্রসন্তান প্রসবে কন্যাসন্তানের সংখ্যা বাংলা থেকে মাত্র ৫ বেশি—৯৭৮। জাতীয় গড় ৯১৪-র তুলনায় অনেক এগিয়ে গিয়েছে বাংলা। ২০১৫-১৬ সালে হয়েছিল ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের চতুর্থ সমীক্ষা। সেই সময় প্রতি ১০০০ পুত্রসন্তান প্রসবে বাংলায় কন্যাসন্তানের সংখ্যা ছিল ৯৬০। তৎকালীন সময়ে জাতীয় গড় ছিল ৮৯১। এই সমীক্ষার পঞ্চম পর্ব সংঘটিত হয়েছিল ২০১৯-২০ সালে। তাতে দেখা গেল, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে দেশ কিছুটা স্বস্তির জায়গায় এসেছে। আর বাংলা চলে এসেছে চ্যাম্পিয়নদের তালিকায়। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “সম্মানের সঙ্গে কন্যাসন্তানকে জন্ম দেওয়া, তাকে বড় করে তোলা, প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্প। শুধু আর্থিক সাহায্য দেয়নি, একটি পরিবেশও গড়ে দিয়েছে। পাশাপাশি আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এখানে কন্যাসন্তানকে অত্যন্ত আদর করি আমরা। তাকে কখনওই পুত্রসন্তানের থেকে আলাদা করে দেখি না। সামাজিকভাবে বাঙালির ঐতিহ্য মহিলাদের সম্মান। তাই কন্যাসন্তান আদরণীয়।” ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণে (পিসিপিএনডিটি আইনে) রাজ্যের নজরদারি কমিটির সদস্য বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুভাষ বিশ্বাস বলেন, “দারুণ খবর। কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রীর প্রত্যক্ষ সাফল্য পাচ্ছে বাংলা। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েরাও আর্থিক নির্ভরতা পাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে উত্তর ভারতের সঙ্গে কোনও তুলনাই চলে না। আর সার্বিকভাবে বলব, পণপ্রথা বন্ধ করতেই হবে। তাহলে আমরা আরও অনেক ধাপ এগিয়ে যেতে পারব।”