আসামে চা জনগোষ্ঠীকে আদি বাসিন্দার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০০৩ সালের সিটিজেনশিপ রুলে এর উল্লেখ রয়েছে। এনআরসিতে সেই সূত্রেই নথি দেখানোর হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন তাঁরা৷ আবার আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৬৬ সাল বা তার আগে থেকে আসামে বসবাসকারীরা সবাই ভারতীয়। সবই তাঁর পক্ষে থাকলেও শুধু বিচারের দিনে ট্রাইবুনালে উপস্থিত হতে না পারায় একতরফা রায়ে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল হাইলাকান্দি জেলার ৬৫ বছর বয়সি চা শ্রমিক সুখদেব রী-কে। এবার ভারতীয় হিসেবে মৃত্যুর শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করতে পারলেন না তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিলের রায়ের দুই মাস পরেই সুখদেবের ঠিকানা হয়, ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, শিলচর সেন্ট্রাল জেল, কাছাড় জেলা’। তিন বছর সেখানে কাটান তিনি। পরে সুপ্রিম কোর্ট দুই বছরের বেশি সময় ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলে সুখদেবও গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু জামিন নয়, পুরোপুরি মুক্তি চেয়েছিলেন সুখদেব। ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বাবা ধীরাজ রী-র নাম রয়েছে। সুখদেব নিজেও ১৯৭৭ সাল থেকে হাইলাকান্দি জেলার আলগাপুরের ভোটার। সব নথি ফরেনার্স ট্রাইবুনালে জমা করেছিলেন। কিন্তু বিচারের দিনে ট্রাইবুনালে উপস্থিত হতে পারেননি।
জামিনে মুক্তি পেয়ে গৌহাটি হাই কোর্টকে সে সব কথা জানিয়ে পুনর্বিচারের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। হাই কোর্ট আগামী ৩ ডিসেম্বর তাঁকে ফের ট্রাইবুনালে গিয়ে ওই সব নথি দেখানোর সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এর আগেই গত শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুখদেব। এখন তাঁর স্ত্রী-পুত্র প্রস্তুত হচ্ছেন ট্রাইবুনালে ওই মামলা লড়ার জন্য। কারণ তা না হলে সুখদেবের পুত্র-সহ পরবর্তী প্রজন্মও বিদেশি বলে গণ্য হবে! প্রয়োজনীয় নথিপত্র হাতে থাকা ছাড়াও তাঁদের কাছে ভরসার কথা, হাই কোর্টের দুই বিচারপতি ট্রাইবুনালের রায়কে অসম্পূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
সুখদেবের স্ত্রী শিশুবালা বলেন, ‘একদিকে দারিদ্র, অন্য দিকে হাতে থাকা নথির ওপরে পরম আস্থার জন্যই মানুষটিকে এত যন্ত্রণা ভুগতে হয়েছিল। ২০১২ সালে বিদেশি নোটিস আসার পর নিয়মিতই ট্রাইবুনালে যাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রতি তারিখে যাওয়া-আসা এবং আইনজীবীর ফি দিতে দিতে আমরা নিঃস্ব হয়ে
পড়েছিলাম।’ তাঁর কথায়, শেষ দিকে সুখদেব আর সব তারিখে হাজির হতে পারছিলেন না। এছাড়া, পরবর্তী তারিখ জেনে আসা ছাড়া ট্রাইবুনালে গিয়েও কোনও কাজ হতো না। তাই ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিলই যে বিচার হবে তা জানার উপায় ছিল না! শিশুবালার আক্ষেপ, ‘জানলে ১০ দিন উপোস থেকে উকিল-মুহুরীর ফি জোগাড় করে সে দিন তাঁকে পাঠাতাম৷ তাহলে মানুষটিকে আর বিদেশি হয়ে মরতে হত না৷’