এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সার্টিফিকেট দিল আরএসএস। কেন্দ্রে দু’দফায় মন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জন্য যা কাজ করেছিলেন, ১৮ জন সাংসদ এবং মোদী মন্ত্রিসভার দু’জন সদস্য নিয়ে তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। এই বিস্ফোরক বিশ্লেষণ উঠে এল খোদ আরএসএসের অভ্যন্তরীণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। বাংলায় বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর বিজেপির ভিতরে-বাইরে সে নিয়ে কম কাটাছেঁড়া হয়নি। কিন্তু সঙ্ঘের রিপোর্টে যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা টেনে দলের দৈন্যদশাকে বেআব্রু করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। রিপোর্টে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে, এনডিএ এবং ইউপিএ জমানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে তাঁর কাজের মাধ্যমে বাংলার মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সঙ্ঘের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “২০১৯ সালে বিজেপিকে বাংলার মানুষ ঢালাও সমর্থন দিয়েছিল। তারই ফল ১৮ জন এমপি। দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ১৬ জন লোকসভা ও ২ জন রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাক্কা দু’বছর সময় পেয়েছিলেন বাংলার ওই মন্ত্রী-এমপিরা। কিন্তু বাংলার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনও কাজই করতে পারেননি। আরও স্পষ্টভাবে বললে, সরাসরি বাংলার মানুষের উপকারে এসেছে, এমন কাজের প্রচার পর্যন্ত করা যায়নি ভোটের আগে।”
পাশাপাশি, একইভাবে সঙ্ঘ উল্লেখ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। রেল-সহ একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। তখন বাংলার জন্য নানা প্রকল্প নিয়ে এসে তড়িঘড়ি তার উদ্বোধন করেছেন। মানুষের মনে দাগ কেটেছে। বাংলা বলেছে, এই মহিলার কাজ করার সদিচ্ছা রয়েছে। এভাবেই কিন্তু ২০১১ বিধানসভা ভোটের আগেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিকল্প হিসেবে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গ বিজেপি ২০২১ সালে তা করে উঠতে পারেনি। তৈরি হয়নি গ্রহণযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এই ব্যর্থতা মানুষের ভরসায় খানিক হলেও আঘাত হেনেছে বলে মনে করে সঙ্ঘ। আরএসএসের মূল্যায়ন, ১৮টি লোকসভা আসন জিতে বিজেপির দিল্লী ও বঙ্গ নেতৃত্ব মনে করেছিল, বাংলায় পা ফেলার শক্ত রাজনৈতিক জমি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিধানসভায় ৭৭ আসনে আটকে যাওয়ার শুরু সেখান থেকেই। অন্তত এমনটাই মত সঙ্ঘের। সাংগঠনিক মূল্যায়নে উঠে এসেছে, বাংলার মানুষ রাজনীতি সচেতন। ফলে অন্যান্য রাজ্যে ভোটে জেতার সমীকরণ কষার চেষ্টার করে বাংলাকে মেলানো যায় না। শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেছিল, যেভাবে দু’বার অসম ও একবার ত্রিপুরা বিজেপির দখলে এসেছিল, ঠিক একই কায়দায় বাংলাও দখল হয়ে যাবে। তবে কর্মীদের মনোবল যাতে না ভাঙে, সে জন্য পাল্টা আশার বাণীও শুনিয়েছে সঙ্ঘ। তারা বলেছে, বিজেপির এই বিপর্যয় সাময়িক। তবে তার জন্য ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া পার্টির সংগঠন ঢেলে সাজা হবে। বিজেপিতে গুরুত্ব বাড়ানো হবে সঙ্ঘের প্রতিনিধিদের। গত সোমবার তিনদিনের কলকাতা সফরে এসেছিলেন মোহন ভাগবত। সঙ্ঘ প্রধান সাফ নির্দেশ দিয়েছেন, “বাংলায় আরও বেশি করে সামাজিক কাজে ব্রতী হতে হবে। রাজনীতিকে দূরে রেখে সেবার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”