প্রকাশ্যে এল নতুন তথ্য। ভুয়ো জনজাতি সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন এনসিবি আধিকারিক সমীর ওয়াংখেড়ে, এমন দাবি আগেই করেছিলেন এনসিপি নেতা তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিক। এ বার সেই দাবির সপক্ষে প্রমাণও দিলেন তিনি। এদিন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির তরফে টুইটে সমীর ওয়াংখেড়ের দুটি স্কুল সার্টিফিকেট পোস্ট করা হয়, যেখানে তার নামের মাঝে ‘দাউদ’ উল্লেখ করা রয়েছে। ধর্ম হিসাবেও ‘মুসলিম’ উল্লেখ করা হয়েছে ওই সার্টিফিকেটে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মুম্বইয়ে প্রমোদতরী থেকে মাদক উদ্ধারের তদন্ত শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই এনসিবির জোনাল অফিসার সমীর ওয়াংখেড়েকে নিশানা করেছিলেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। তিনি সমীর ওয়াংখেড়ের প্রথম স্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে দাবি করেছিলেন যে, সমীর ওয়াংখেড়ে ভুয়ো জনজাতি সার্টিফিকেট দেখিয়ে সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন। তিনি আদতে মুসলমান। এরপরই এ দিন মুম্বইয়ের ওয়াডালার সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল এবং দাদরের সেন্ট পল হাই স্কুল থেকে সমীর ওয়াংখেড়ের সার্টিফিকেট বের করে পোস্ট করা হয়। যদিও এনসিপির দাবির পাল্টা জবাবে সমীর ওয়াংখেড়ের পরিবারের তরফেও বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন ১৯৯৫ সালের স্কুল উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্রে তাঁর নাম উল্লেখ রয়েছে “ওয়াংখেড়ে সমীর ধ্যানদেব” হিসাবে। জাতি হিসাবে “মাহার” উল্লেখ করা।
জন্মগতভাবে সমীর ওয়াংখেড়ে মুসলিম হলেও তিনি ভুয়ো হিন্দু জনজাতি শংসাপত্র ব্যবহার করে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন এবং সেখান থেকেই সরকারি চাকরি পেয়েছেন, এমনটাই দাবি করেছেন নবাব মালিক। উল্লেখ্য এর আগে সমীর ওয়াংখেড়ের জন্ম শংসাপত্রও প্রকাশ্যে এনেছিলেন নবাব। যেখানে তাঁর নাম সমীর দাউদ ওয়াংখেড়ে হিসাবেই উল্লেখ করা ছিল। সমীর ওয়াংখেড়ের পরিবারের তরফে প্রকাশিত তথ্য প্রমাণগুলি নকল বলেও দাবি করেছেন এনসিপি নেতা। তিনি বলেন, “এই সার্টিফিকেটগুলি সবকটাই নকল। উনি এখন কম্পিউটারে তৈরি সার্টিফিকেট দেখাচ্ছেন। আমরা আদালতে সমস্ত আসল তথ্য প্রমাণ জমা দিয়েছি। সেগুলি সবকটিই নথিভুক্ত। এবার ওনার চাকরি যাবেই।”
প্রসঙ্গত, ধর্ম ঘিরে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরই সমীর ওয়াংখেড়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছিলেন, “আমার বাবা শ্রী ধ্যানদেব কাচরুজি ওয়াংখেড়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর। তিনি পুণের আবগারি দফতরের অধীনে কাজ করতেন। আমার বাবা হিন্দু হলেও আমার প্রয়াত মা মুসলিম ছিলেন। ধর্মীয় মিশ্রণের কারণেই আমি একটি ধর্মনিরপেক্ষ পরিবারে বড় হয়েছি এবং আমি আমার ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। আমি ২০০৬ সালে ডঃ শাবানা কুরেশীকে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিয়ে করি। ২০১৬ সালে আমরা মিলিত সিদ্ধান্তেই বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনেই নিজেদের বিবাহ বিচ্ছিন্ন করি। ২০১৭ সালে আমি ক্রান্তি দীনানাথ রেডকারকে বিয়ে করি।”
পাশাপাশি, সমীর ওয়াংখেড়ের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বাবাও দাবি করেছিলেন, সমীর ওয়াংখেড়ে মুসলিম, এ কথা জেনেই তিনি নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় সমীর সমস্ত মুসলিম আচার পালন করত বলেও দাবি করেন তিনি। নিকাহনামাতেও সমীর ওয়াংখেড়ের নাম দাউদ ওয়াংখেড়ে নামেই উল্লেখিত ছিল এবং তাঁর পরিবারের সকলেই মুসলিম, এ কথাই জানতেন বলে দাবি তাঁর প্রথম স্ত্রীয়ের পরিবারের। মাদক মামলার তদন্তে ধর্ম নিয়ে জলঘোলা কেন করা হচ্ছে, এই বিষয়ে এনসিপি নেতা তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, “বিষয়টা সমীর ওয়াংখেড়ের ধর্ম নয়, তিনি কীভাবে ভুয়ো শংসাপত্র দেখিয়ে এনসিবি অফিসার হয়েছেন, সেই দুর্নীতি সকলের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।”