বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর একটু হলেও সম্বিত ফিরেছে পদ্মশিবিরের। স্বপ্ন যে রাতারাতি সত্যি হয়ে যায় না, তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন বিজেপি নেতারা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কলকাতার ২২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। ঠিক যেমন ভাবে রাজ্যের ১২১টি বিধানসভা আসনেও এগিয়ে ছিল। সেই হিসেব কষেই নীলবাড়ি দখলের স্বপ্নে বিভোর ছিল বিজেপি। কিন্তু তা আর সত্যি হয়নি। পাশাপাশি কলকাতা পুরসভা দখলের আশাতেও বিশ বাঁও জল। সবটা বুঝে এখন বিজেপির লক্ষ্য, যে কোনও মূল্যে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করা। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে সংগঠনের যে ছন্নছাড়া ও বেহাল পরিণতি, তা নিয়েই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন গেরুয়া-নেতৃত্ব। বিগত ২০১৫ সালে কলকাতা পুর এলাকার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৪টিতে জয় পায় তৃণমূল। বামেরা পেয়েছিল ১৫টি ওয়ার্ড আর বিজেপি ৭টি। কংগ্রেস জয় পায় ৫টি ওয়ার্ডে। বাকি ৩টি ওয়ার্ডে জয়ী হন নির্দল প্রার্থীরা। এর পরে দু’টি নির্বাচন হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা। তারও পরে কলকাতার ভবানীপুর আসনে সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচন হয়েছে। আর প্রতিটিতেই মহানগরের ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলে বদল এসেছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য বিজেপির হিসাব অনুযায়ী ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ১৩২টি ওয়ার্ড এলাকায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। পিছিয়ে ছিল ৭০, ৭৪, ৮৭, ২২, ২৩, ২৫, ২৭, ৪২, ২১, ২৪, ৩১ এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে। বিজেপি এগিয়ে ছিল প্রথম ১১টি ওয়ার্ডে। কংগ্রেস এগিয়ে ছিল শুধুই ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে। বামেরা কোথাও এগিয়ে থাকতে পারেনি। ভবানীপুর উপনির্বাচনে দেখা যায় ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে ফের এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ফলে বিজেপির অঙ্ক বলছে শহরের ৯টি ওয়ার্ড এলাকায় পদ্মে এগিয়ে। যদিও বিধানসভা নির্বাচন আর পুরনির্বাচনের ভোটের হিসেব যে এক হয় না সেটাও মাথায় রাখছে বিজেপি। আর সেই হিসেব ধরেই গত বছরের মতো এ বারেও কমপক্ষে ৭টি ওয়ার্ডে যাতে জয় পাওয়া যায় সেটাই লক্ষ্য বিজেপির। তবে গত বার ৭টি আসন জিতলেও সবক’টি ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। ৭, ২২, ২৩, ৪২, ৭০ ৮৬, এবং ৮৭ ওয়ার্ডে জয় পায় বিজেপি। যার মধ্যে ৭ এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষ ও অসীম বসু পরে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার ওই ওয়ার্ডগুলি না হলেও মোট কমপক্ষে ৭টি ওয়ার্ড পেতে চাইছে বিজেপি। এক রাজ্য নেতার কথায়, “বিধানসভা নির্বাচনের ফলের উপরে কিছুই নির্ভর করে না। তবে এটাও ঠিক যে কলকাতায় আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বরাবরই কম। আর এখন তা বেশ ছন্নছাড়া অবস্থায়। তাই বড় লক্ষ্য নেওয়ার কোনও অর্থই হয় না। দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করাটাই প্রধান লক্ষ্য।”