একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর কেটে গিয়েছে ছ’মাস। এখনও বাংলায় ভরাডুবির জ্বালা ভুলতে পারছে না বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। সুযোগ পেলেই বাংলাকে অহেতুক বদনাম করার প্রবণতা অব্যাহত পদ্মশিবিরের নেতাদের। অন্য রাজ্যে ভোটের প্রচারে পর্যন্ত চলছে সেই কুৎসা। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডাও তার ব্যতিক্রম নন। সম্প্রতি বাংলার বিমানবন্দরকে উত্তরাখণ্ডের বলে চালানোর চেষ্টা ধরা পড়ে যাওয়ায় মুখ পুড়েছে কেন্দ্রের। আর মঙ্গলবার সেই উত্তরাখণ্ডে গিয়েই বাঙালিদের সামনে বাংলাকে অপমানের চেষ্টা করলেন নাড্ডা। বললেন, চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে ওই রাজ্যে। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই এই কুৎসার বিরুদ্ধে পাল্টা সরব হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি বলি কী বাংলার নামে বিষোদ্গার করার আগে নিজেদের দিকে আগে তাকান! আয়নায় মুখটা দেখুন। চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। আপনাদের উত্তরপ্রদেশে প্রতিদিন কী হচ্ছে, সেদিকেই নজর দিন। এতবড় উৎসব চলে গেল, কোথাও একটা ঘটনাও ঘটেনি। আমরা ঘটতে দিইনি। এটাই বাংলার সংস্কৃতি।”
প্রসঙ্গত, এদিন উত্তরাখণ্ডের স্থানীয় বাঙালি সমাজের সম্মেলনে হাজির ছিলেন নাড্ডা। সেখানে রীতিমতো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তিনি বলেন, “বাংলায় রক্তগঙ্গা বইছে। দুর্নীতি থেকে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন থেকে সরকারি অর্থের নয়ছয়—সব ক্ষেত্রেই বাংলা দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে। চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে পশ্চিমবঙ্গে। নির্বাচনে দল ও কেন্দ্রীয় সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করেও পরাস্ত হয়েছে।” আর সেই তুলনা টানার পরেই তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে উত্তরাখণ্ডে বিজেপিকে জেতানোর আর্জি। এদিন প্রচারে যত না উত্তরাখণ্ড সরকার ও নিজের দল সম্পর্কে তিনি ভাষণ দিয়েছেন, তার থেকে বেশি সময় ব্যয় করেছেন বাংলার বদনামে। তিনি আরও বলেন, “ফলপ্রকাশের পর সন্ত্রাসের কারণে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ বাংলা থেকে বিতাড়িত। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।”
নাড্ডার কথার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তুলে ধরেছেন এ রাজ্যের উন্নয়নের যাবতীয় খতিয়ান। তাঁর কথায়, “আজ বিজেপির সভাপতি উত্তরাখণ্ডের বাঙালিদের সামনে বাংলার বদনাম করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলার অবস্থা নাকি খুব খারাপ। অথচ আজ আমাদের দুয়ারে সরকার প্রকল্পকে অন্য রাজ্যগুলি অনুসরণ করছে। অবশ্য তাতে আমাদের আপত্তি নেই। স্বাস্থ্যসাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, কন্যাশ্রী – আমাদের ভালো কাজকে অনুসরণ করতেই হবে।” উল্লেখ্য, আগামী বছর পাঞ্জাব, হিমাচল, উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুরের সঙ্গেই বিধানসভার ভোট উত্তরাখণ্ডেও। তাই বিজেপি যথেষ্ট চাপে। কারণ, কমবেশি প্রতিটি রাজ্যেই দলের ভোটব্যাঙ্ক ধাক্কা খাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে চলতি বছরে গোষ্ঠীকোন্দলের মোকাবিলায় একের পর এক মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়েছে। তাই চাপে পড়ে এখন থেকেই ভোটের প্রচারে নেমেছে বিজেপি। উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রবাসী বাঙালিদের বাস। তাঁদের একাংশ ১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সীমান্ত পেরিয়ে চলে এসেছিল ভারতে। তাঁরা আর ফিরে যাননি। পাশাপাশি বাংলা থেকেও বহু মানুষ কর্মসূত্রে থিতু হয়েছেন সেরাজ্যে। তাদের কানে বাংলা সম্পর্কে নিন্দামন্দ করে মন জেতার চেষ্টা শেষে ব্যুমেরাং হবে না তো? রাজনৈতিক মহলে উঠছে প্রশ্ন।