অন্তর্দ্বন্দ্বের অশনি সংকেত কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না গেরুয়াশিবিরের। ফের গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত বিজেপি। রাজ্যে আসন্ন পুরনির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত মতানৈক্য ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। শনিবার যার জেরে পণ্ডই হয়ে গেল কলকাতা কর্পোরেশন নিয়ে প্রস্তাবিত মিটিং। গত মঙ্গলবার কলকাতার দু’টি সাংগঠনিক জেলাকে চারটি ‘জোন’-এ ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষরা। কলকাতা দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার দুই আহ্বায়ক করা হয়েছিল তুষারকান্তি ঘোষ এবং রুদ্রনীল ঘোষকে। অন্যদিকে, কলকাতা উত্তর সাংগঠনিক জেলায় দুই আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কল্যাণ রুদ্র ও প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। সেদিনই সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের সামনে শনিবার এই চারটি জোনের বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এদিন কোনও জোনেই ভোটের রণকৌশল স্থির করতে আলোচনায় বসতে পারেনি পদ্মশিবির। কেবল তাই নয়, উত্তর কলকাতার ‘জোন’ মিটিং নিয়ে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত নাটক। দুই ‘জোন’ আহ্বায়ক দাবি করেছেন বৈঠক হয়েছে। যদিও জেলা সভাপতির পরিষ্কার কথা, এদিন কোনও বৈঠক হয়নি।
প্রসঙ্গত, সাংগঠনিক স্তরে এই ধরনের দায়িত্ব বন্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি কিংবা তার তরফে নির্দিষ্ট কোনও পদাধিকারী দলের লেটার হেডে তা লিখিতভাবে জানানো হয়। দলের প্রতিটি শাখায় সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচদিনে কেটে গেলেও, আশ্চর্যজনকভাবে পার্টির তরফে এই ধরনের লিখিত বার্তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়নি। কারণ, একাধিক জোনের আহ্বায়ক নিয়ে দলের অন্দরেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। পাছে হাওড়া (সদর) জেলা সভাপতির (সম্প্রতি বহিষ্কৃত) মতো দলবিরোধী ঘটনা ঘটে, তাই বাড়তি সতর্ক হয়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে আড়ালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিনের বৈঠক না হওয়া নিয়ে রুদ্রনীলের প্রতিক্রিয়া, আহ্বায়ক-সহ আহ্বায়ক নিয়োগ হলেও বাকি কমিটি তৈরি হয়নি। তাই এদিন বৈঠক হয়নি। খুব শীঘ্রই কমিটি ঘোষণা হলে বৈঠক ডাকা হবে। একই সুরে কথা বলেছেন তুষারকান্তি ঘোষ। বিজেপির এই রাজ্য সম্পাদকের দাবি, “ভেবেছিলাম জোনের বৈঠক করব। কিন্তু কমিটিই তৈরি হয়নি। তাই আর বৈঠক হয়নি।”
পাশাপাশি, উত্তরের দুই জোন আহ্বায়ক কল্যাণ ও প্রিয়াঙ্কা দাবি করেছেন তাঁরা এদিন জোন বৈঠক করেছেন। কিন্তু উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি শিবাজী সিংহ রায়ের সাফ কথা, শনিবার কোনও জোন বৈঠক হয়নি। জেলা সভাপতির দাবি, জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বৈঠক হয়নি। রাজ্য পার্টি থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। তা যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ এ ধরনের বৈঠক আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকাই যায় না। তবে কলকাতা পুরভোটে বিজেপি ভালো ফল করবে বলেও আশাবাদী শিবাজীবাবু। তাঁর বক্তব্য, প্রলয়ের (বিধানসভা ভোট) পর সৃষ্টি (কলকাতা পুরভোট)। এদিকে, ওই জেলার প্রাক্তন সভাপতি দীনেশ পান্ডে জোনের সহ-আহ্বায়ক করার বিষয়টি এদিন ফোনে জেনেছেন বলে জানিয়েছেন। পার্টি লিখিতভাবে না জানালে তিনি কোনও দায়িত্ব নেবেন না বলেও জানান। হাওড়া কর্পোরেশনেও একইকরম ডামাডোল পরিস্থিতি।