প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে রাজকোষ ভরতে চাওয়াই টার্গেট মোদী সরকারের। ইতিমধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির ‘কৃতিত্বকে’ তুলে ধরে সাফল্যের ঢাক পেটাচ্ছেন মোদীর মন্ত্রীরা। কিন্তু হিসাব বলছে, তা থেকে সরকারের ঘরে আসছে মাত্র ২,৭০০ কোটি টাকা।
এ পর্যন্ত বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ থেকে রাজকোষে মোট প্রাপ্তি ৯,৩৩০ কোটি। যেখানে বাজেটে ওই খাতে আয়ের লক্ষ্য রাখা হয়েছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা! অর্থাৎ, অর্থবর্ষের প্রথম সাড়ে সাত মাস কেটে যাওয়ার পরে ১০ হাজার কোটিও আসেনি। এসেছে লক্ষ্যের মাত্র ৫ শতাংশ মতো টাকা।
এই পরিস্থিতিতে চলতি আর্থিক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ (নিয়ন্ত্রণ সরকারি হাতে রেখেও কিছুটা শেয়ার বিক্রি) ও বেসরকারিকরণ (সিংহ ভাগ শেয়ার বিক্রির ফলে মালিকানা বদল) থেকে আয়ের লক্ষ্য ছোঁয়া অসম্ভব বলেই মনে করছে অর্থ মন্ত্রক। কোন পথে হেঁটে সেই অভাব পূরণ হবে, না কি শেষে সরকারি খরচ ছাঁটাই করতে হবে, তা নিয়ে এখন শুরু হয়েছে হিসেব কষা।
প্রসঙ্গত, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণ থেকে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ সূত্রের মতে, এ বছর সেই লক্ষ্য ছোঁয়া যাবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। যুক্তি, অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছিলেন ফেব্রুয়ারিতে। তার পর জুন-জুলাইয়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণের কাজে বাধা পড়েছে।
চলতি বছরের বাজেটেই অর্থমন্ত্রী প্রথম বার সরাসরি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এয়ার ইন্ডিয়া টাটার হাতে তুলে দিয়ে মোদী সরকার সংস্কারের সাফল্য দাবি করছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকায় এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির চুক্তি হচ্ছে। তার মধ্যে টাটা সন্স (টাটা গোষ্ঠীর মূল সংস্থা) ১৫,৩০০ কোটি টাকার ঋণের বোঝা নেবে। ফলে সরকারের ঘরে নগদ আসছে মাত্র ২,৭০০ কোটি টাকা।’
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এয়ার ইন্ডিয়ার পরে শিপিং কর্পোরেশন, বিইএমএল, নীলাচল ইস্পাত, পবন হংসের মতো সংস্থা বিলগ্নিকরণের তালিকায় রয়েছে। আসল ভরসা অবশ্য ভারত পেট্রোলিয়ামের (বিপিসিএল) বেসরকারিকরণ ও এলআইসি বা জীবন বিমা নিগমের শেয়ার প্রথম বার বাজারে ছাড়া।
কেন্দ্রের হাতে থাকা বিপিসিএল-এর ৫২.৯৮ শতাংশ অংশীদারির সবটাই বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই মুহূর্তে ওই শেয়ারের মোট মূল্য ৪৯ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থ মন্ত্রকের আশা, ওই শেয়ার বেচে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে।
এলআইসির শেয়ার বাজারে ছেড়েও এক লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তোলার আশায় রয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু বিপিসিএল-এর বেসরকারিকরণ আদৌ চলতি বছরে হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একশো ভাগ নিশ্চিত নয় এলআইসি-সহ বাকি বিলগ্নিকরণও। এই পরিস্থিতিতে বিলগ্নি ও বেসরকারিকরণ খাতে আয়ের ঘাটতি পূরণ করে ওঠা তাই নির্মলার মন্ত্রকের সামনে মস্ত চ্যালেঞ্জ।