বৃহস্পতিবার ভোররাতে কোচবিহারের সিতাই সীমান্তে গরু পাচারকারী সন্দেহে কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বিএসএফ। আর সেই গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে তিন ব্যক্তির। যার মধ্যে একজন ভারতীয় ও দু’জন বাংলাদেশি। এই ঘটনায় বিএসএফকে কাঠগড়ায় তুলে তোপ দাগলেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। শুক্রবার বিধানসভায় বিএসএফের গুলি চালানোর ঘটনায় উদয়ন জানিয়েছেন, ‘মাথায় গুলি লেগে প্রকাশ বর্মণের মৃত্যু কেন হল? বিএসএফ-এর মদত ছাড়া সীমান্তে কোনও কিছুই পাচার করা সম্ভব নয়। আমি সীমান্তবর্তী এলাকার বিধায়ক। অধিকাংশ কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের সমস্যার কথা আমি জানি। স্টিলের ব্লেড দিয়ে মোড়া কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে কী করে পাচার হয়? তা নিয়ে সকলের মনেই প্রশ্ন আছে।’
প্রসঙ্গত, বিএসএফের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাত ৩টে নাগাদ বাংলাদেশের দিক থেকে কয়েকজন দুষ্কৃতী ভারতে গরু পাচারের চেষ্টা করে। প্রথমে তাঁদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু বিএসএফের হুঁশিয়ারিতে কান দেননি গরু পাচারকারীরা। তাদের আটকাতে প্রাথমিক ভাবে নন লিথেল অস্ত্র ব্যবহার করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। উল্টে দুষ্কৃতীরা বাহিনীর ওপর চড়াও হয়। তখনই গুলি চালানো হয়, আর এই ঘটনায় মৃত্যু হয় তিন’জনের। তবে এই দাবি মানতে নারাজ দিনহাটার বিধায়ক। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিএসএফ মাঝে মধ্যে দু’একজনকে গ্রেফতার করে, গুলি চালায়, কিন্তু পাচার সব সময় চলতে থাকে। মাঝে মাঝে যখন পাচারকারীদের সঙ্গে টাকা পয়সার ভাগে সমস্যা হয়, তখন বিএসএফ গুলি চালায়। এলাকার মানুষদের ওপর জুলুম চলতে থাকে। মনে রাখতে হবে, কাউকে হত্যা করার অধিকার বিএসএফ-এর নেই।’
উদয়ন আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি, কাঁটাতারের বেড়া একেবারে জিরো পয়েন্টে দেওয়া হোক। সেখানে গেট না থাকলেও অসুবিধা নেই। তা হচ্ছে না, ভারতের ভূখণ্ডের ১৫০ গজ ভিতরে কাটাতাঁরের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। ভারত নিজের জমি ছেড়ে দিচ্ছে। যত অত্যাচার, জুলুম, ভারতের কাঁটাতার এলাকার ভিতরে ভারতীয়দের ওপর করা হয়। এত দিন ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফের এলাকা ছিল। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় এই এলাকায় বিএসএফ হস্তক্ষেপ করতে পারত। এখন নতুন আইন বলবৎ করে পাঞ্জাব, বাংলা এবং আসামে ৫০ কিলোমিটার বিএসএফ-এর আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ করেছেন। আমরাও প্রতিবাদ করছি। কারণ, ৫০ কিলোমিটার হলে অনেকদূর পর্যন্ত এলাকা বিএসএফের এক্তিয়ারের মধ্যে চলে আসবে। আমরা যাঁরা সীমান্ত এলাকায় থাকি, তাঁরা জানি, কী ভাবে বিএসএফ-এর এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় জুলুম চালায় বাহিনী।’