বাংলার পরে এবার মিজোরামে আমলা নিয়োগ ঘিরে বিতর্কে মোদী সরকার। মিজোরামে ক্ষমতায় রয়েছে এনডিএ সরকারই। তবে তা সত্ত্বেও সে রাজ্য মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ ঘিরে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের কাজিয়া আরও বাড়ল। কেন্দ্রের পাঠানো মুখ্যসচিব মিজো ভাষা না জানায় অবিলম্বে তাঁর বদলে মিজোভাষী মুখ্যসচিব নিয়োগের দাবি করল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা এ নিয়ে চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। বলেন, ‘কেন্দ্র কথা না রাখলে, প্রথম থেকে এনডিএ-র শরিক থাকা এমএনএফ রাজ্যে কংগ্রেসের বিদ্রুপের পাত্র হয়ে উঠবে।’ বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রের কর্তৃত্ব ফলানোর মানসিকতা ফের এক বার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই ঘটনায়।
আগের মুখ্যসচিব লালনানমাওইয়া ৩১ অক্টোবর স্বেচ্ছাবসর নেওয়ায় ১৯৮৯ সালের মণিপুর ক্যাডারের আইএএস তথা অতিরিক্ত মুখ্যসচিব জে সি রামথাঙ্গার নাম মুখ্যসচিব হিসেবে ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। একই দিনে কেন্দ্র ঘোষণা করে, ১৯৮৮ সালের আইএএস রেণু শর্মা ১ নভেম্বর থেকে মিজোরামের মুখ্যসচিব হবেন। অরুণাচল-গোয়া-মিজোরাম ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্যাডার রেণু ডেপুটেশনে দিল্লীতে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্বে দিল্লীর পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় সাময়িক ভাবে সাসপেন্ড হন রেণু। যদিও গত মাসেই সচিব হিসেবে পদোন্নতি হয়েছে তাঁর। অতীতে দু’দফায় মিজোরামে স্বরাষ্ট্র ও প্রশাসনিক দফতরে কমিশনার-সচিব ও প্রধানসচিব পদে কাজ করেছেন তিনি। সম্প্রতি আইজলে এসে পদের ভার নেন রেণু।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহকে চিঠি পাঠিয়ে জানান, অতীতে রাজ্যে কাজ করার সুবাদে প্রশাসনিক স্তরে সকলেই অবহিত আছেন যে রেণু মিশ্র এক বর্ণ মিজো জানেন না। এ দিকে রাজ্যের মানুষ তথা রাজ্যের এক জন মন্ত্রীও হিন্দি বোঝেন না। ইংরেজিতেও অনেকেরই সমস্যা। জোরামের ভাষ্য, মিজোরামের সরকারি ও প্রধান যোগাযোগের ভাষায় কাজ চালানোর মতো জ্ঞান নেই, এমন কাউকে অতীতে কখনও মিজোরামের মুখ্যসচিব করা হয়নি। মুখ্যসচিবের সঙ্গে রাজ্যবাসী, মন্ত্রী-বিধায়কদের ভাষাগত দেওয়াল থাকলে মুখ্যসচিবের পক্ষে সুচারু ও দক্ষ ভাবে কাজ করা অসম্ভব। দেশের সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই বিষয়টি সমান। রামথাঙ্গার নাম না করেই জোরাম লেখেন, সব দিক বিচার করে অবিলম্বে রেণু মিশ্রের বদলে মিজো জানা কাউকে মুখ্যসচিব নিয়োগ করা হোক।
বিরোধীদের মতে, একের পর এক ঘটনায় রাজ্যের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে কেন্দ্র। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় পর্ব ছাড়াও বাংলার রাজ্য পুলিশের ডিজিপি নিয়োগ ঘিরে এখনও জট কাটেনি। রাজ্য পুলিশের প্রধান নির্বাচনের প্রশ্নেও বাংলা সরকারের পাঠানো তালিকা মেনে নিতে অস্বীকার করে কেন্দ্র। মিজোরামের ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘সাম্প্রতিক উদাহরণগুলি থেকেই স্পষ্ট আমলা নিয়োগের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের পছন্দকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে চাইছে না কেন্দ্র। সব জায়গায় নিজের পছন্দের লোককে বসানোর বিজেপির ওই প্রচেষ্টা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর।’ এনডিএ শরিক হয়েও তাঁর আবেদন না রাখা নিয়ে ক্ষোভ জানাতে ছাড়েননি জোরামও। চিঠিতে তিনি মনে করিয়ে দেন, বাকি শরিকরা বারবার শিবির বদলালেও, তাঁর দল এমএনএফ প্রথম থেকে এনডিএ-র বিশ্বস্ত শরিক হয়ে রয়েছে।