সারা বাংলা জুড়ে জনগণের মুখে হাসি ফুটিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প। সম্প্রতি এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে অসন্তোষের ইঙ্গিত মিলছে। স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। বাংলার সরকারের উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক সাফল্যকে কি তাহলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে? রাজনৈতিক মহলে উঠছে প্রশ্ন। আর তাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে দিল্লীর কেজরিওয়াল সরকারের ঘরে ঘরে রেশন প্রকল্পের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের খবরদারি। গত মার্চ মাসে খাদ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়, এই প্রকল্পের নামের সঙ্গে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ কথাটি যোগ করা যাবে না। পরবর্তীকালে দিল্লীর ‘আপ’ সরকার প্রকল্পের নাম থেকে মুখ্যমন্ত্রী শব্দটি বাদ দিলেও তা কেন্দ্রের অনুমোদন পায়নি। বরং, রেশন গ্রাহকের বাড়িতে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে নেই বলেই বাধা দিয়েছে খাদ্যমন্ত্রক। একইভাবে বাংলার এই উদ্যোগে মোদী সরকার বাধ সাধতে পারে বলে আগেভাগে কোমর বেঁধে নেমেছে রাজ্য সরকার। গত ২৭শে অক্টোবর এই প্রকল্পটি চালু সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। তাতে খাদ্যদপ্তর বিস্তারিত জানিয়েছে, এনএফএসএ অনুযায়ীই প্রকল্পটি নভেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এনএফএসএ’র কয়েকটি ধারার উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রকল্প সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এই উল্লেখ বেনজির। এক্ষেত্রে রাজ্যের উদ্দেশ্য একটাই। দুয়ারে রেশন প্রকল্পে আপত্তি জানানোর কেন্দ্র যাতে মমতা সরকারের যুক্তি বিবেচনা করতে পারে। এনএফএসএ’র ১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। অর্থাৎ, ওই ধারা অনুযায়ী, রেশন ‘আউটলেটে’ অর্থাৎ দোকান থেকে ‘ডোর স্টেপ’ ডেলিভারির উল্লেখ আছে। এছাড়া, ৩২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আইনে উল্লেখ না থাকা খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাহকদের সুবিধা দিতে নিজেদের খরচে পরিষেবা দিতে পারে রাজ্য। এই দু’টি ধারাই বিজ্ঞপ্তিতে তুলে এনেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর মাধ্যমে রাজ্য সরকার বোঝাতে চেয়েছে, আইন সংশোধন না করলেও চলবে। কারণ, ওই আইনে সরাসরি বলা না হলেও, উল্লিখিত ধারা অনুযায়ী রাজ্য সরকার নিজ উদ্যোগে রেশন ডিলারদের মাধ্যমেই গ্রাহকদের বাড়িতে খাদ্যশস্য পৌঁছে দিতে পারে। অর্থাৎ, কেন্দ্রকে এখানে বিনা যুক্তিতে কোনোভাবেই জমি ছাড়বে না মমতা সরকার। এমনিতে এনএফএসএ’র আওতায় রাজ্যে ৬ কোটি ২ লক্ষ রেশন গ্রাহক আছেন। এর বাইরে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় রেশন নিতে পারেন সাড়ে ৪ কোটি রেশন গ্রাহক। রাজ্যের অধীন এই গ্রাহকদের ক্ষেত্রে মোদি সরকারের আপত্তি তোলার বিশেষ সুযোগ নেই। কারণ, ওই গ্রাহকদের খাদ্যশস্য খাতে ভর্তুকির পুরোটাই আসে রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে।