গত বছরই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। বাংলায় করোনার প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ার পর বাধ্য হয়ে মানুষ রেস্তোরাঁর খাবার থেকে শুরু করে মুদিখানার সামগ্রী, শাকসব্জি – এ সবই হোম ডেলিভারির মাধ্যমে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিল মিষ্টিও। এবার ভাইফোঁটাতেও সেই ধারা বজায় রইল। কলকাতার নামজাদা একাধিক মিষ্টির দোকান জানিয়েছে, এবার অনলাইনে মিষ্টির অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা যেন গত বছরের থেকে কিছুটা বেশিই। শুধু পাড়ায় পাড়ায় নয়, পুনে-বেঙ্গালুরু থেকে শুরু করে রাজস্থানেও পৌঁছে যাচ্ছে ভাইফোঁটার মিষ্টি।
উল্লেখ্য, মিষ্টান্ন বিপণী ‘মিঠাই’য়ে এবার যেটুকু বিক্রিবাটা হচ্ছে, তার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আসছে অনলাইন অর্ডার থেকে। এখানকার কর্ণধার নীলাঞ্জন ঘোষের কথায়, “আমাদের দোকানটি শহরের এমন জায়গায় অবস্থিত, সেখানে অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা বেশি। বহু মানুষ বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না বলে এতদিন ড্রাইভার বা অন্যদের উপর মিষ্টি আনার ভার দিতেন। এখন অনলাইন অর্ডার চালু হওয়ায়, তাঁরা নিজেরাই পছন্দ করে মিষ্টি কিনতে পারেন।” তার জন্য অবশ্য তাঁরা নির্ভর করেন নামজাদা ফুড ডেলিভারি সংস্থাগুলির উপর। কিন্তু সেই সংস্থাগুলিকে দিতে হয় চড়া কমিশন। সেক্ষেত্রে কি মিষ্টির গুণমানের সঙ্গে আপোস করতে হয়? নীলাঞ্জনবাবুর কথায়, “আপোসের কোনও প্রশ্ন নেই। আমরা মিষ্টি পিছু এক টাকা বেশি দাম নিয়ে থাকি এক্ষেত্রে। তাতে খরচও খুব একটা বাড়ে না, আমাদের গুণমাণের উপর চোখে বুজে ভরসা করতে পারেন ক্রেতারা। এমনকী যেখানে আমরা অনলাইন অর্ডারের প্যাকিং করি, সেখানে সিসিটিভিতে নজরদারি চালানো হয়। পাছে মিষ্টির সংখ্যা কম হয়েছে, এমন অভিযোগ না আসে, তাই সেই ফুটেজ আমরা সংগ্রহে রাখি।”
পাশাপাশি, বলরাম মল্লিক ও রাধারমণ মল্লিকের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যবসার ২০ শতাংশ আসছে অনলাইন অর্ডার থেকে। তাঁর কথায়, “আমরা এক্ষেত্রে লাভ কিছুটা কম করি। কিন্তু গুণমানের সঙ্গে আপোসের প্রশ্ন নেই। আমরা বাইরের ডেলিভারি সংস্থার তরফেও যেমন অর্ডার সাপ্লাই করি, তেমনই আমাদের নিজস্ব অ্যাপও আছে। সেটিকেও আমরা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি। তাতে আমরা আরও ভালো পরিষেবা দিতে পারব। এবারও বলরামের মিষ্টি ভিনরাজ্যে যাচ্ছে, জানিয়েছেন সুদীপবাবু। তাঁরা দিল্লী, মুম্বইয়ের মতো শহরে মিষ্টি পাঠাচ্ছেন ঠিকই, তবে ভাইফোঁটার জন্য সবচেয়ে বেশি মিষ্টির চাহিদা রয়েছে বেঙ্গালুরুতে, জানিয়েছেন সুদীপবাবু।
এপ্রসঙ্গে কে সি দাশের কর্ণধার ধীমান দাশ বলেন, “আমরা গত বছর হোম ডেলিভারি শুরু করতে পারিনি। কিন্তু এবার তা করেছি। তার জন্য নিজেরাই পরিকাঠামো গড়েছি। তাতে সাড়াও মিলছে ভালো। সম্প্রতি এত বেশি অর্ডার ছিল যে, পর্যাপ্ত ডেলিভারি ম্যানের অভাবে সেই অর্ডার নিতে পারিনি। তবে অনলাইনে বুকিং করার ব্যাপারে বাইরের রাজ্যের মানুষের উৎসাহ অনেক বেশি। এমন জায়গা থেকে ডাক আসছে, সেসব জায়গার নাম আমরাও শুনিনি। গোয়া থেকে রাজস্থান, আমরা অর্ডার নিচ্ছি। তার বেশিরভাগটাই অবশ্য টিনের রসগোল্লা।”
তবে খিদিরপুরের প্রাচীন প্রতিষ্ঠান সতীশ ময়রায় এবার ভাইফোঁটায় অনলাইন অর্ডার নেওয়া বন্ধ। এখানকার কর্ণধার অরূপকুমার দাসের কথায়, “আমরা সারা বছর অনলাইনে অর্ডার নিই। কিন্তু ভাইফোঁটায় তা বন্ধ রেখেছি। কারণ মানুষ নিজে এসে দেখে ও চেখে মিষ্টি কিনতেই বেশি পছন্দ করেন। আমাদের এলাকায় এই রেওয়াজেই অভ্যস্ত বাসিন্দারা। তবে গতবারের থেকে এবারের বাজার অনেক বেশি চাঙ্গা, জানিয়েছেন অরূপবাবু। তিনি বলেন, “আমরা ক্রেতাদের থেকে যে অর্ডার পাচ্ছি, তা করোনার আগের সময়ের ভাইফোঁটার উৎসবকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।”