একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর হাতে আসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের দায়িত্বভার। এবার দিনহাটায় শোচনীয় হারের কারণে কি তিরস্কৃত হবেন নিশীথ প্রামাণিক? মঙ্গলবার উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর প্রশ্ন উঠেছে পদ্মশিবিরে অন্দরে। বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ৫৭ ভোটে বিজেপি জিতেছিল দিনহাটা কেন্দ্রে। জিতেছিলেন নিশীথ। লোকসভা নির্বাচনের মতো উত্তরবঙ্গে বিধানসভাতেও বিজেপির ফল মোটের উপর ভাল হয়েছিল। তারই পুরস্কার পেয়েছিলেন দিনহাটায় জয়ী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ। তাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেকনজরে তিনি। দিনহাটার বিধায়ক পদ থেকে নিশীথ ইস্তফা দেওয়ায় সেখানে উপনির্বাচন হয়। মঙ্গলবার তারই ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, ৫৭ ভোটে নিশীথের কাছে হেরে যাওয়া উদয়ন গুহ জিতেছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯ ভোটে। নিশীথ তাঁর নিজের বুথে হেরেছেন। উদয়নের বিরুদ্ধে ভোটে-লড়া বিজেপি প্রার্থীও তাঁর বুথে হেরেছেন।
এদিন ভোটগণনার সকাল থেকেই নিশীথকে কোথাও দেখা যায়নি। সকাল থেকে তাঁর মোবাইলও বেজে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিশীথ যখন পুরস্কৃত হচ্ছেন, তখনই কাজের খতিয়ানের নিরিখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব চলে গিয়েছিল বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীর। বাবুল পরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু দিনহাটায় এই বিপুল হারের পর নিশীথের নিজের দলও তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি মালতী রাভা মনে করিয়ে দিয়েছেন, নিশীথ এ বারের ভোটে তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি। দিনহাটার ফল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মালতী বলেন, “এ বারের ভোটে ওঁর (নিশীথ) অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল।” এরকম হতশ্রী হার মেনে নিতে পারছেন না বিজেপির কোচবিহার জেলার নেতৃত্ব। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানাচ্ছেন, দিনহাটার বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডল আগে থেকেই হেরে ছিলেন। তাঁকে কোনও ভাবেই সাহায্য করেননি নিশীথ। তবে পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, নিশীথ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্নেহধন্য। ফলে তাঁর কপালে তিরস্কার যে জুটবেই, তাও হলফ করে বলা যায় না। তবে এই হারের পর নিশীথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। যেমন জেলার পুরনো বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করে, নিশীথের কারণেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁদের গুরুত্ব কমেছে। শীর্ষনেতৃত্ব নিশীথের কথাই মেনে চলেছেন। জেলায় নিশীথই দলের হয়ে শেষ কথা বলতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক পুরনো বিজেপি কর্মী যেমন বলেছেন, “অশোক মণ্ডল ভাল মানুষ। তাঁর হার আমাদের কাছে বেদনার। কিন্তু মানুষ হয়তো ভোটবাক্সে আমাদের নেতাদের ঔদ্ধত্যেরই জবাব দিতে চেয়েছেন। নেতৃত্ব সেটা বুঝলে ভাল। না বুঝলে দলের ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হবে।”