আগামী বছরই গোয়া বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরো সহ একের পর হেভিওয়েট নেতা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। মমতা ম্যাজিককে কাজে লাগিয়ে উপকূলেল রাজ্য গোয়ায় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল। বিজেপিকে রুখতে বারংবার ব্যর্থ তাই কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় মোদী-শাহকে কড়া চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিজেপিকে দুরমুশ করে তৃণমূলের উত্থান জাতীয় রাজনীতিতে নতুন দিশা দেখিয়েছে। তাই ভারতীয় রাজনীতিতে মানুষের আস্থা বাড়তে শুরু করেছে মমতার দলের উপর।
শুক্রবার, টানা তিন দিনের ঠাসা কর্মসূচী নিয়ে আজ গোয়ায় জনসংযোগ করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন সভা থেকে মমতা বলেন, “গোয়াকে আমরা ভালোবাসি। আমরা বাইরে থেকে আসেনি, ভারত যেমন আমাদের মাতৃভূমি, গোয়াও আমাদের মাতৃভূমি। গোয়ার লোকেরাই গোয়ার হয়ে কাজ করবে। আমরা বাইরে থেকে সাহায্য করব। আমরা একতার জন্য লড়ব। সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করি আমি। আমরা মরতে রাজি। কিন্তু বিজেপির সামনে মাথা নত করব না। যারা আমাদের দেশের ক্ষতি করছে আয়কর, কেন্দ্রীয় এজেন্সির নামে। গোয়ার মূল সমস্যা কেন্দ্রের দাদাগিরি। গোয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।”
পাশাপাশি দেশের সর্বধর্মসমন্বয় প্রসঙ্গেও গেরুয়াশিবিরের দিকে তোপ দাগেন তিনি। বলেন, “আমরা মানুষের ভাগাভাগিতে বিশ্বাস করিনা। আমাদের দেশ বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর। গীতিকার জাভেদ আখতারকেও ওরা আসতে দেয় না। কারন সে বিজেপির লোক নয়। মানবতাই একমাত্র ধর্ম। আমরা গোটা বিশ্বকে দেখাতে চাই যে ভারত একমাত্র দেশ যেখানে যে কেউ যেখানে খুশি যেতে পারে। থাকতে পারে। গানের ভাষা অনেক বড় বার্তা দিতে পারে। আপনাদের সংস্কৃতি খুব সমৃদ্ধ।
মমতা আরও জানান, “আমি আজ মাছের বাজারে গিয়েছিলাম, বিরোধীদলের নেতাদের সাথে কথা বললাম গোয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমাদের সবার একটি পদবী আছে। কিন্তু আমাকে বলতে হয় আমি একজন ব্রাহ্মণ, একজন হিন্দু। আমি লজ্জিত। আমি সবার আগে ভারতের নাগরিক। আমাদের ধর্ম নির্বিশেষে এক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। আমরা এক, মানুষ। আমরা একসাথে কাজ করব। বাংলায় থাকলেও আমি মাঝেমধ্যেই গোয়াতে আসবো। বাংলাতেও সমুদ্র আছে। আপনারাও ফুটবল ভালোবাসেন, আমরাও। আপনারাও শান্তি চান, আমরাও। তাহলে পার্থক্য কোথায়?” বিজেপিকে একহাত নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি সবার মনে বিষ ভরছে। আমাকে শান্তি সম্মেলনে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল ওরা যেতে দেয়নি।”
এছাড়া বাংলায় প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন নিয়েও কথা বলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। “আমাদের রাজ্যে ৪২টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। নির্বাচনী ইস্তেহারে আমি যা যা প্রকল্পের দাবি করেছিলাম ১০০% করে দিয়েছি। আমরা রাজ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাই। ছাত্রদের সাইকেল দিই, সবাইকে বিনামূল্যে রেশন, শিক্ষা দিই। হিন্দু-মুসলিম ভাগ করি না। প্রতি মহিলার জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প শুরু করেছি। মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। তাদের যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আমি ৫০ হাজার ফুটবল দিয়েছি গত মাসে।”
গোয়া প্রসঙ্গে মমতার প্রশ্ন, “বাংলা পারলে গোয়া পারবে না কেন? গোয়াতে পর্যটনশিল্পের এমন সম্ভাবনা আছে, তাহলে এখানে বেকারত্ব হবে কেন? আমাদের শিল্পী, সাংবাদিকদের জন্যও প্রকল্প আছে কেউ বাদ যায়না। আমরা কোনও কাজ ফেলে রাখি নি। এর আগেও কোঙ্কন রেলওয়ের আমন্ত্রণে গোয়ায় এসেছি। রেলওয়ে পলিউশন ডিভাইসের কাজ এগোনোর জন্য।” পাশাপাশি বিজেপিকে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, “কাজ করাটাই আসল ধর্ম। আদর্শ রাজনীতিবিদ নিজের কথা রাখেন। আচ্ছে দিন, মানুষের ভালো থাকা। গ্যাসের দাম রোজ বৃদ্ধি না পাওয়া। বিজেপি গরিব মানুষদের লুঠ করে নিজেদের কোষাগার ভরছে। আমি সাধারন মানুষ হয়েই থাকতে চাই। আমি কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নই। বিজেপিকে আটকাতেই আমাদের আসা। আমাকে গোয়াতে আসতে কালো পতাকা দেখাল। আমি কি গোয়াতে আসতে পারি না! আমি ওদের নমস্কার করলাম।
তৃণমূলের উত্থান প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, “আমি যখন তৃণমূল দল শুরু করেছিলাম, তখন তার বয়স ছিল এক মাস ২২ দিন। আমরা তখনও ভোটে লড়ে সাতটি সংসদ আসন দখল করেছিলাম। অন্য দল আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা মাথা নত করব না। ক্ষমতা আমার কাছে বিষয় না। আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমরা বিনা পয়সায় পরিষেবা দিই। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে আমাদের হাতে পুরোটা থাকে না। আমরা ওদের অনুরোধ করতে পারি। এজন্যেই আমি বাংলায় স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প চালু করেছি। আমাদের একে অপরের ভাষাকে সম্মান করা উচিত। স্থানীয় ভাষাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।”
গোয়ার মানুষের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন মমতা। “কিছু কিছু মানুষকে কখনও কখনও ভুল বোঝানো যায়। সবাইকে একসাথে ভুল বোঝানো যায় না। সারাজীবন লড়াই করেছি। সিপিএম আমার মাথায় মেরেছিল। আমি মরেই যেতাম। কিন্তু আমার মনের জোর আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিজেপি আমাদের এজেন্সি দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করবে আমি জানি। কিন্তু আমরা লড়াই করব। গোয়া সোনার খনি। আমাকে বাইরের কেউ মনে করবেন না। আমাকে আপনাদের দিদি মনে করুন।” জানান তিনি।