একুশের বাংলার ভোটের প্রচার সভায় বারবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলা ভোটারদের আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি সভাতেই ‘মা-বোনেদের’ কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের ফলাফলেও সেই ছাপ দেখা গিয়েছে। মহিলা ভোটারদের সিংহভাগই তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। সেই অঙ্ক এবার সুদূর গোয়াতেও খাটাতে চান তৃণমূল সুপ্রিমো। শুক্রবার তাঁর বক্তৃতা থেকেই পরিষ্কার যে গোয়াতেও মহিলা ভোটকে নিজেদের দিকে টানতে আলাদা করে গুরুত্ব দেবে তৃণমূল। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে গোয়ার বিশাল সংখ্যক মৎস্যজীবী ভোটার।
এদিন গোয়ায় দাঁড়িয়ে মহিলা ক্ষমতায়ন ও যুবকদের উন্নয়ন হবে তাঁদের লক্ষ্য বলে মন্তব্য জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে মেয়েদের ওপর অত্যাচার বাড়ছে। মেয়েদের ক্ষমতায়নই হবে আমাদের লক্ষ্য। আমরা ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছি মেয়েদের। ভারতে বেকারত্ব বাড়ছে। কিন্তু বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে’। আবার একুশের বাংলার ভোটে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের বহিরাগত বলে আক্রমণ করা মমতা এদিন গোয়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি বহিরাগত নই। মুখ্যমন্ত্রীও হতে আসিনি। গোয়া গোয়াবাসীর।’ তার পর তিনি যোগ করেন, তাঁর প্রথম পরিচয় তিনি ভারতবাসী।
বাংলার ভোটের মতোই আগামী বছরে গোয়ার ভোটেও মহিলা ভোটারদের টার্গেট করেছে ঘাসফুল শিবির। আর তার সঙ্গে এখানে যুক্ত হচ্ছেন মৎস্যজীবী ভোটাররা। উল্লেখ্য, গোয়ার একটা বড় অংশ এই মাছ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের দাবি-দাওয়া, পাওয়া-না পাওয়া স্বাভাবিকভাবে আছে। সেই বিরোধী স্বর কাজে লাগাতে চায় তৃণমূল। গোয়া সফরে প্রথমেই সেই মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে যে তিনি আলাদা করে দিচ্ছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়োনোর বার্তা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘গোয়ায় মৎস্যজীবীরা বিপদে রয়েছে। কেউ দেখার নেই। কিন্তু তৃণমূল আপনাদের জন্য ওয়েলফেয়ার কমিটি গড়ে দেবে। আমাদের ইশতাহারেও আপনাদের দাবি-দাওয়ার সমস্ত বিষয় থাকবে’।
গোয়ার পানাজি শহরের মান্ডবি নদীর ওপর মৎসজীবীদের প্রধান কেন্দ্র বেতিম। বেতিমের মালিম বিচ হল গোয়ার মৎস্য ব্যবসায়ীদের প্রধান কেন্দ্র। যা এখন গভীর সমস্যায়। একে লক ডাউন। তার ওপর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। মৎস্য ব্যবসায়ীরা এখন ঘোর সংকটে। এই অবস্থায় মমতা তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। আশ্বাস দিলেন সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করবে গোয়া তৃণমূল। তাই সফরের প্রথমেই যেভাবে মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল নেত্রী, তার মধ্যে সুনিপুণ ভোট-অঙ্কই লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহল বলছে, আটঘাট বেঁধেই গোয়ায় নামছে তৃণমূল। আর সেটা দলের সুপ্রিমোর প্রথম দিনের বক্তব্য ও সফর সূচি থেকেই পরিষ্কার।