শুধু নয় কৃষ্ণ কল্যাণী বা সৌমেন রায়। তালিকায় আছেন আরও এক ডজন। মানে উত্তরবঙ্গের ১২জন বিজেপি বিধায়ক পা বাড়িয়ে আছেন তৃণমূলে যোগদানের জন্য। ঘাসফুল শিবিরের সবুজ সঙ্কেত মিললেই সেই যোগাদান ও জার্সি বদলের পালা শুরু হয়ে যাবে। এখন তাঁরা শুধু থাকবেন ঘাপটি মেরে বিজেপিরই অন্দরে। এই জল্পনা শুধু রাজ্য রাজনীতিতেই নয়, বঙ্গ বিজেপির অন্দরেও বেশ ভালই ছড়িয়ে পড়েছে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির ৭৭জন প্রার্থী জয়ী হয়ে বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে ৩০জনই জয়ী হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ থেকে। কিন্তু সেই জয়ের পরে পরেই দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ও শান্তিপুর থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সাংসদ জগন্নাথ সরকার। সেই দুই কেন্দ্রেই আগামী ৩০ অক্টোবর উপনির্বাচন হতে চলেছে। আবার বাকি বিধায়কদের মধ্যে কৃষ্ণ কল্যাণীকে নিয়ে ইতিমধ্যেই ৫জন দল ছেড়েছেন। সকলেই যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। ফলে বিজেপির বর্তমান বিধায়ক সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৭০। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পদ্ম শিবিরের ভাঙন এখানেই থেমে যাচ্ছে না। বরঞ্চ আগামী দিনে তা আরও বড় আকার ধারন করতে চলেছে। উত্তরবঙ্গের এক ডজন বিধায়ক যোগাযোগ রেখে চলেছেন তৃণমূলের সঙ্গে। ইতিমধ্যেই তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের একদফা কথা হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সবুজ সঙ্কেত দিলেই সেই যোগদানের পালা শুরু হয়ে যাবে।
তৃণমূল চাইছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভাল ফল করা উত্তরবঙ্গের বুকেই তাঁদের বেশি করে ধাক্কা দিতে। কেননা উত্তরের ৮টি জেলা থেকে ৩০টি আসনে জেতা বিজেপিকে বড় ধাক্কা দিতে পারলেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া যাবে মোদী বাহিনীকে। যদি সেই পরিকল্পনা সফল হয় তাহলে ২০১৯ সালের ভোটে উত্তরবঙ্গ থেকে খালি হাতে ফেরা তৃণমূলকে এবারে আর খালি হাতে ফিরতে হবে না। তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার ১২জন বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে দলের আলোচনা চলছে। এক এক করে এদের যোগদান করানো হবে তৃণমূল। ঘটনা হচ্ছে মুকুল রায় সমেত বিজেপির ৫জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিলেও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু দলের অন্দরে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছেন জয়ী বিধায়কদের দলে ধরে রাখতে না পারে। কেননা তাঁরা জানেন, এই দলছুটের ঘটনা ঠেকানো না গেলে দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন। আর সেই সূত্রেই তাঁরা এখন রীতিমত চাপে আছেন নিজেদেরই পদ ধরে রাখতে পারা নিয়ে।
বঙ্গ বিজেপির নেতারাও কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন যে দলের এক ডজন বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। কিন্তু তাঁরা কিছুই করতে পারছেন না তাঁদের বিরুদ্ধে। কেননা যে ৫জন বিজেপি থেকে তৃণমূলে গিয়েছেন বা আগামী দিনে যদি ১২জন যানও বড্ডজোর তাঁদের বিধায়ক পদ বাতিলের জন্য মামলা ঠুকতে পারেন তাঁরা। এর বেশি কিছুই করতে পারবেন না তাঁরা। কেননা বিধায়ক পদ বাতিলের পরে সেই আসনে উপনির্বাচন হলেই যে সেখানে বিজেপির প্রার্থীই জয়ী হবেন তা জোর গলায় এখন আর কেউই বলতে পারবে না। তাই অনেকেই চাইছেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া বিধায়কদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা না ঠুকে বা তাঁদের বিধায়ক পদ বাতিল না করে বরঞ্চ দল হুইপ জারি করুক।