ঠিক গত বছরের এমন সময়েই কেন্দ্রের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে গোটা প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন পুরো দেশের কৃষকরা। দিল্লীর সিংঘু সীমান্তে বসেছিলেন তাঁরা। কৃষকদের দাবি ছিল, এই তিন আইন প্রত্যাহার করা হোক অথবা সংশোধন। এরপর দফায় দফায় কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে এই তিন আইন নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও কোনও সুরাহা সূত্র মেলেনি। আর এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে কৃষকদের ওপর বহু অবিচার–অন্যায় হতে দেখা গিয়েছে। যার সাম্প্রতিক প্রমাণ উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খিরির ঘটনা। কৃষক আন্দোলন এখন ১১ মাসে পা দিয়েছে। আর ঠিক একমাস পরই একবছর পূর্ণ হবে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম) ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে এই উপলক্ষ্যে।
এসকেএমের থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এই প্রতিবাদ পরিকল্পনা করা হয়েছে মঙ্গলবার তেহসিল ও জেলা সদরে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এসকেএম বলেছে, “এই প্রতিবাদ মূলত লখিমপুর খিরির ঘটনায় যুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার টেনির গ্রেফতার ও মন্ত্রীত্ব খারিজ করার দাবি নিয়ে।” পাশাপাশি এসকেএম এও বলেছে, “জেলা কালেক্টর/শাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচী শেষ হবে।”
উল্লেখ্য, গত ৩রা অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খিরির ঘটনায় চার কৃষক সহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। টেনির ছেলে আশিস মিশ্র ও আরও ১২ জনকে এই ঘটনায় যুক্ত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় কৃষকরা এই হিংসাত্মক ঘটনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র ওরফে টেনি ও তাঁর ছেলেকে এই ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন। উত্তরপ্রদেশের উত্তর-মধ্যদিকের লখিমপুর খিরিতে মন্ত্রীর কনভয়ের সঙ্গে আসা একটি গাড়ি কৃষকদের পিষে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে যে প্রতিবাদরত কৃষকদের পেছনে থাকা মহিন্দ্রা থার গাড়ি ক্রমশ এগিয়ে আসছে কৃষকদের দিকে। যদিও অজয় মিশ্র টেনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছিলেন যে তাঁর ছেলে ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল না। অজয় মিশ্রের ছেলে আশিসও এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বাবার সুরে সুর মেলায়। তবে পরে আশিস মিশ্র সহ একাধিক ব্যক্তিকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া, এসকেএম তাদের অভিযোগে আরও জানিয়েছে যে কৃষক আন্দোনের ক্ষমতাবান সমর্থক প্রবাসী দর্শন সিং ধালিওয়াল, যিনি শিকাগো থেকে এসেছেন তাঁকে কেন্দ্র কৃষক আন্দোলনের অংশ না হওয়ার জন্য ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এসকেএম এ প্রসঙ্গে বলেছে, “তাঁকে দেশে ঢুকতে না দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। ভারত সরকারের অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ অগ্রহণযোগ্য এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।” এর আগেও লখিমপুর খিরির ঘটনা নিয়ে কিছুদিন আগেই দেশজুড়ে রেল রোকো কর্মসূচীর ডাক দিয়েছিল এসকেএম। সেই সময় দেশের একাধিক স্টেশনে লাইনের ওপর কৃষকরা বসে পড়ার কারণে একাধিক ট্রেন আটকে গিয়েছিল। তবে এই আন্দোলনের মতোই মঙ্গলবারের প্রতিবাদ কর্মসূচীও তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে করতে চান।