একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দিয়ে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আর তারপরেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে শুরু হয়েছে অন্যান্য রাজ্যের সংগঠন বিস্তার এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান বিরোধী মুখ করে তোলার চেষ্টা। এবং তা করতে গিয়ে যখন মমতা থেকে অভিষেক, কুণাল ঘোষ থেকে সুখেন্দুশেখর রায়রা যখন রুটিন করে বলা শুরু করেছেন কংগ্রেসকে দিয়ে কিস্যু হবে না, তখন সিপিএমের সম্মেলনগুলিতেও পার্টি সদস্যরা ঝড় তুলে বলছেন, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদীকে ভারতের কংগ্রেস পার্টি মার্ক্সবাদী হতে দেব না। হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এমনই চিন্তার ঐক্য দেখা গেল বাংলা সিপিএমের নিচুতলার। কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্য নিয়ে তুলোধনা চলছে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, সিপিএমের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। অক্টোবরে এরিয়া কমিটির সম্মেলনগুলিতে যখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের লাইন নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে তখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, পার্টি কংগ্রেসে লাইন বদলের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বিজেপিকে ঠেকাতে সিপিএম চলবে কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতা করেই। উল্লেখ্য, গত পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাট শিবিরের ডিফেন্স টপকে সীতারামের লাইন গৃহীত হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস-সহ সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দলের সঙ্গে সখ্য রাখবে সিপিএম। তবে যে বাংলা ইউনিট কার্যত ইয়েচুরির ‘কোলের ছেলে’ বলে সিপিএমের মধ্যে বলা হয় সেখানেই জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
জেলায় জেলায় সম্মেলন গড়াচ্ছে মাঝরাত পর্যন্ত। জোটপন্থী নেতাদের ভোটাভুটি করে কমিটি ছাড়া করছেন পার্টি সদস্যরা। ক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে একটার পর একটা এলাকার পার্টি সংগঠনে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারাও। শুধু কংগ্রেস নয়, আইএসএফের সঙ্গে মোর্চা গড়া নিয়েও মহম্মদ সেলিমদের বিরুদ্ধে কামান দাগছেন শাখা স্তরের পার্টি সদস্যরা। এদিকে, কেরালা-সহ সিপিএমের দক্ষিণ লবি বাংলায় জোট করা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কংগ্রেসকে যে চোখে মমতারা দেখছেন একই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখছে সিপিএমের নিচুতলাও। সিপিএমের কর্মীদের একটা বড় অংশ মনে করছে, জোট ভাঙা-গড়ার খামখেয়ালিপনার জন্যই পার্টির এই দুর্দিন।