করোনায় আক্রান্ত হলে বয়স্কদের বেশি বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই স্বাস্থ্যকর্মী, প্রথম সারির করোনা-যোদ্ধাদের পরেই ১লা মার্চ থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। আর এখন মোদীর সরকার ১০০ কোটি ডোজ টিকাদান উপলক্ষে মহোৎসব শুরু করলেও পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের সবাইকে কোভিডের টিকা দেওয়া হয়নি। প্রায় ২০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ এক ডোজ টিকাও পাননি। টিকাকরণের দ্বিতীয় ধাপে, ১লা এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। তাঁদের ক্ষেত্রেও বিপুল সংখ্যকের টিকাকরণ বাকি রয়েছে। অথচ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এঁদের সকলেরই টিকাকরণ হয়ে যাবে বলে সরকার দাবি করেছিল। দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ৩ কোটি মানুষ এখনও এক ডোজ টিকাও পাননি। প্রায় ৭.৫ কোটি মানুষের এখনও দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়া বাকি। একই ভাবে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ৭ কোটির বেশি এখনও প্রথম ডোজ টিকাই পাননি। এই বয়সের ১৯ কোটি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ় টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। এঁদের সবাইকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দু’ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় সাড়ে ১৩ কোটির বেশি মানুষের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১০.৭ কোটির কাছাকাছি প্রথম ডোজ় পেয়েছেন। দু’ডোজ টিকা পেয়েছেন ৬.২০ কোটির কাছাকাছি। ৪৫ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ২৫ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬.৯ কোটির কাছাকাছি মানুষ প্রথম ডোজ় টিকা পেয়েছেন। দু’ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৮.৮ কোটি মানুষ। ফলে কোভিড ফের ধাক্কা দিলে এই বিপুল সংখ্যক বয়স্ক মানুষকে নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র বলছে, এই মুহূর্তে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার গতি বাড়ানো। কেন্দ্র ১০০ কোটি ডোজ টিকাকরণ নিয়ে প্রচার করলেও, দেশের জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ দু’ডোজ টিকা পেয়েছেন। গত সোমবারই কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে জানিয়েছে, প্রথম ডোজ় টিকা নেওয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার সময় চলে এলেও অনেকেই টিকা নেননি। ফলে দ্বিতীয় ডোজ টিকার সংখ্যা কমছে না। উৎসবের মরসুমে অক্টোবর মাসে এমনিতেই দৈনিক টিকাকরণের হার কমেছিল। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে, ৯ থেকে ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে মাত্র ৩.১৬ কোটি টিকাকরণ হয়েছিল। প্রথম সপ্তাহ— ২থেকে ৮ই অক্টোবরের মধ্যে ৪.১৯ কোটি টিকাকরণের তুলনায় যা খুবই কম।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে, ১৬ থেকে ২২শে অক্টোবরের মধ্যে টিকাকরণের গতি বেড়েছে। এই সাত দিনে প্রায় ৩.৭ কোটি টিকাকরণ হয়েছে। একই ভাবে গত সপ্তাহ থেকে প্রথম ডোজের তুলনায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা বেশি দেওয়া হচ্ছে। গত চার দিনে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার সংখ্যা প্রথম ডোজ়ের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন না, তা হল, ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের সবাইকে টিকা দিতে হলে প্রতি দিন ১.২৫ কোটি ডোজ করে টিকা দিতে হবে। অথচ অক্টোবরে দৈনিক মাত্র ৪৭ লক্ষ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।” এদিকে টিকার একটিও ডোজ না পাওয়ার নিরিখে সবার ওপরে ভারত। সম্প্রতি ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা” নামক একটি পোর্টালে ২৩শে অক্টোবর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে টিকার একটিও ডোজ পাননি এমন ব্যক্তির সংখ্যা ভারতবর্ষেই সব থেকে বেশি। তার পরেই রয়েছে চীন। ১০ লক্ষ ব্যক্তির হিসেবে ভারতে এখনও ৬৮১ জন জন মানুষ টিকা পাননি। চীনে সেই সংখ্যা ৩৪৩। তারপরেই রয়েছে নাইজেরিয়া। তাদের সংখ্যা ২০৬। এর পর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান। ১০ লক্ষ মানুষের হিসেবে সেখানে টিকা পাননি যথাক্রমে ১৬৫ এবং ১৫৭ জন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বার বার দাবি করেছেন, টিকা প্রদানের নিরিখে সবার ওপরে ভারত রয়েছে। সেই দাবি যদিও বার বার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দাবিটিতে যে বিন্দুমাত্র কোন সত্যতা নেই তা আরও একবার হাতেকলমে বুঝিয়ে দিল এই রিপোর্ট।