আজও আকছাড় খবরে উঠে আসে কন্যাভ্রুণ হত্যা, বাল্য বিবাহের মতো ঘটনা। এখনও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য দেশে সচেতনতার প্রচার জারি রয়েছে। এই সব ঘটনার মধ্যেই অনন্য নজির গড়লেন নদিয়ার এক দম্পতি। নাহ! কোনও মাটির প্রতিমা নয়,বাড়িতে নিজের কন্যা সন্তানকে লক্ষ্মীরূপে পুজো করলেন তাঁরা। নারী শক্তিকে সম্মান জানাতেই তাঁদের এই উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনাটি কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের। মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করলেন পঞ্চায়েত অফিসার দম্পতি। ১০ বছরের নাবালিকাকে রীতিমতো লক্ষ্মীরূপে সাজিয়ে ব্রাহ্মণ ডেকে পুজো করলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা নাগাদ অনন্য এই পুজোর সাক্ষী থাকল এলকাবাসী।
সূত্রের খবর, কৃষ্ণগঞ্জের দুর্গাপুরের বাসিন্দা মিতালি বিশ্বাস। তিনি বনগাঁ গ্রাম পঞ্চায়েতের একজ়িকিউটিভ অফিসার ৷ অন্যদিকে, হিজুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের একজ়িকিউটিভ অফিসার হলেন দেবাশীস বিশ্বাস। শ্যামনগরে দেবাশীস বাবুর সঙ্গে বিয়ে হয় মিতালিদেবীর। বর্তমানে পরিবারে রয়েছে বাবা অমল বিশ্বাস,মা চম্পা বিশ্বাস। মিতালিদেবী ও দেবাশীস বাবুর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে দেবাদৃতাকেই গতকাল লক্ষ্মীরূপে পুজো করলেন তাঁরা।
দেবাদৃতার দাদু বলেন,”আমিতো ভাবতেই পারছি না এটা আমার দিদি ভাই । লালশাড়ি, মাথায় মুকুট গলায় মালা, একহাতে পদ্ম, কাঁকে ছোট কলস মুদ্রা দেবদৃতাকে সত্তিই লক্ষীর মতোই লাগছিল।’ ঠাকুমার হাতে ফুল বেলপাতা নিয়ে অঞ্জলীর মন্ত্র উচ্চারণ করতে গিয়ে দেখা গেল কালো ফ্রেমের চশমা দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছিল, তিনি ভেবে উঠতে পারছিলেন না, এই সেই আদরের নাতনি,যে মনের অজান্তেই দশ বছরে পড়েছে । বিধাতার লিখনে আজ তাকে লক্ষী রুপে পূজা করছেন সে একদিন অন্য সংসারে চলে যাবে, তখন তাঁরা কীভাবে আদরের নাতনিকে ছেড়ে থাকবেন।
দেবাশীসবাবু বলেন,”আমরা পঞ্চায়েত অফিসার হয়ে দেখতে পাই বিভিন্ন জায়গায় কন্যা সন্তানকে অনেক মানুষই অবহেলা করেন। পুএবধু হিসেবে অন্যের কন্যাসন্তানকে নিজের ঘরে আনার পর তার প্রতি অনেকেই অত্যাচার করেন। আমরা মনে করি পুএ ও কন্যা সন্তান উভয়েই সমান ।” অন্যদিকে দেবাদৃতার মা মিতালী বিশ্বাস বলেন, কর্মক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই কীভাবে মেয়েদের উপর অত্যাচার হয়।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে নিজেরা চিন্তাভাবনা করি, কন্যাকে বাঁচাতে হবে ৷ অনেক পরিবারই জানেন না মেয়েরা সমাজের কতবড় সম্পদ ।” তিনি আরও জানান, “আমার মেয়ে জন্ম নেবার পর থেকেই আয়, উন্নতি সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ।তাই আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিই এবছর মাটির প্রতিমা বাদ দিয়ে নিজের মেয়েকেই লক্ষ্মী রূপে পূজা করব তাই করলাম। আমরা চাই প্রতিটি মানুষই যেন নিজেদের কন্যাসন্তানকে মাতৃরূপে সম্মান করেন।