কাঁকুলিয়াকাণ্ডে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীদের হাতে। যত সময় এগোচ্ছে, জোড়া দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পরতে পরতে শুধুই রহস্য! কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকির বাড়ির নথি ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে তদন্তকারীরা। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই নথি পাওয়া গিয়েছে সুবীরের গাড়ি থেকে! এখানেই প্রশ্ন, তবে কি বাড়ি কেনার টোপ দিয়ে সুবীর চাকিকে ডেকে এনে খুন করা হল? গোটাটাই কি পূর্ব পরিকল্পিত?
রবিবার গড়িয়াহাট থানা এলাকার ৭৮ এ কাঁকুলিয়া রোডের একটি তিনতলা বাড়ি থেকে সুবীর চাকি ও তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলের রক্তাক্ত, ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে প্রথম দিকে ধোঁয়াশা থাকলেও ধীরে ধীরে এবার বোধহয় কিছু সূত্র হাতে আসছে তদন্তকারীদের। মঙ্গলবার সকালে লালবাজারের ডগ স্কোয়াড ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পৌঁছতেই পুলিশ কুকুর বাড়িটিতে ঘোরাফেরার পরই সোজা চলে যায় বালিগঞ্জ রেলস্টেশনে।
সেখানকার এক ও দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঘোরাঘুরি করে ডগ স্কোয়াডের ওই দক্ষ সদস্য। এরপরই ফের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে যায় সে। তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, আততায়ীরা এই দু’জনকে খুন করার পর ট্রেনে চেপেই গা ঢাকা দিয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে বালিগঞ্জ স্টেশনের সিসিক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হবে বলেই লালবাজার সূত্রে খবর।
একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, প্রফেশনাল কিলারই এই ঘটনায় যুক্ত। কোনও একজন আততায়ী নয়। ঘটনার সময় একাধিক জনের উপস্থিতি সেখানে ছিল। যাদের মধ্যে সুবীর চাকির পরিচিতও কেউ বা কেউ কেউ ছিল। সূত্রের খবর , প্ৰথমে সুবীর চাকিকে গলা কেটে খুন করা হয়। এরপর কোপানো হয় গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলকে।
ঘটনার দিন কাঁকুলিয়ার বাড়ির নথি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সুবীর। তবে সেই সব নথি ছিল তাঁর গাড়ির ভিতরে। শুধু কি এই বাড়ি বা সম্পত্তির কারণেই খুন নাকি ব্যক্তিগত বা কাজের জায়গায় কোনও শত্রুতা থেকে এই ঘটনা সমস্ত পথ খোলা রেখেই চলছে তদন্ত। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কাঁকুলিয়ার বাড়িতে ফ্রিডি স্ক্যানার এনে ফ্রিডি মডেলিংয়ের মাধ্যমে বাড়ির ভিতরের অবয়ব তৈরির কাজ চালাচ্ছেন টেকনিক্যাল এক্সপার্টরা। পাশাপাশি সুবীর চাকি যে সংস্থায় কর্মরত ছিলেন সেই সংস্থার অধিকারিক এবং সুবীরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলবেন গোয়েন্দারা।
জানা যাচ্ছে, প্রথম দফা লকডাউনের আগে মুম্বইতে থাকতেন সুবীর চাকি। পরে নিউটাউনে এসে থাকতে শুরু করেন। তবে নিউটাউনে বাড়িটি বেশ কয়েক বছর আগেই কেনা বলে সূত্রের খবর। গড়িয়াহাটের যে বাড়িতে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়, সেখানে মাঝে মধ্যে সুবীর চাকির মা এসে থাকতেন। মঙ্গলবার দুপুরেই পিস ওয়ার্ল্ড থেকে সুবীর চাকির দেহ নিউটাউনের বাড়িতে নিয়ে যায় হয়। দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন।
কর্পোরেট কর্তা সুবীরকে খুন করার পিছনে একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কারণ, বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিলেন সুবীর। কলকাতার একাধিক বিলাসবহুল আবাসনে তাঁর ফ্ল্যাট রয়েছে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কাঁকুলিয়া রোডের যে বাড়িতে সুবীর খুন হয়েছেন সেটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও বারই তিনি নিজে বাড়ি দেখাতে যাননি। প্রতি বারই গাড়িচালক রবীন ক্রেতাদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি দেখাতেন। এ বার কেন সুবীর নিজে সঙ্গে গেলেন, সেই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।