বাংলা-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে দেশে এক নাগাড়ে বেড়েই চলেছে জ্বালানির দাম। উৎসবের মরশুমে আরও মহার্ঘ হয়েছে পেট্রোল-ডিজেল। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেরও দাম হয়েছে আকাশছোঁয়া। নাভিশ্বাস উঠেছে আমজনতার। তবে কেন্দ্র এখনও এ ব্যাপারে উদাসীন বলেই অভিযোগ। তাদের কোনও হেলদোলই নেই। আসলে মোদী সরকারের উপরমহল একমত যে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানো দরকার। কিন্তু তা কীভাবে? তারই উত্তর মিলছে না।
প্রসঙ্গেত, গত বছরের তুলনায় এ বছর মোদী সরকারের রাজকোষের ছবি যথেষ্ট ভাল। আয়কর, কর্পোরেট কর থেকে বেশ ভাল আয় হয়েছে। জিএসটি বাবদ প্রতি মাসে কম-বেশি ১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে আসছে। কিন্তু তার পরেও উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই করে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাতে মোদী সরকার ইতস্তত করছে। কারণ, এয়ার ইন্ডিয়া বেচে দেওয়া গেলেও ভারত পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানা বেচে কত টাকা ঘরে আসবে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রক এখনও নিশ্চিত নয়। তবে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট আসন্ন। আর তার আগে পেট্রোলের দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। ডিজেলের দাম সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে জ্বালানির দাম কমানোর রাস্তা খুঁজতেই হচ্ছে।
গত বছর মে মাসে কেন্দ্র পেট্রোলে প্রতি লিটারে ১০ টাকা ও ডিজেলে ১৩ টাকা শুল্ক বাড়িয়েছিল। সেই থেকেই পেট্রোলে প্রায় ৩৩ টাকা এবং ডিজেলে প্রায় ৩২ টাকা করে কর আদায় করছে কেন্দ্র। চলতি অর্থ বছরে এপ্রিল থেকে আগস্টের পাঁচ মাসে পেট্রোল-ডিজেলের শুল্ক থেকে ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে সরকার। শুল্ক কমানো নিয়ে তেল মন্ত্রক এক দিকে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অন্য দিকে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সৌদির আরব, রাশিয়ার মতো ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করেছেন। যাতে সস্তায় অশোধিত তেল আমদানি করা যায়।
কেন এখনই উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দেওয়া হচ্ছে না? অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘তেলের দাম এখন ১০০ টাকার কোঠায়। ফলে কেন্দ্র দু’পাঁচ টাকা কমালে বিশেষ লাভ হবে না। কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে শুল্ক কমাতে হবে। রাজ্যগুলির কোষাগারের হাল কেন্দ্রের থেকেও খারাপ। তাই রাজ্যগুলি রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু পেট্রোলে ১০ টাকা বা ডিজেলে ১৩ টাকা শুল্ক কমিয়ে দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’ এর কারণ পেট্রোল পাম্পগুলো কার্যত সরকারের কর আদায় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। জ্বালানিতে শুল্ক কমিয়ে দিলে তা থেকে সরকারের নিশ্চিত আয় ধাক্কা খাবে।
এদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, গত বছর অতিমারির জন্য বিশ্ব বাজারে জ্বালানির চাহিদা কম বলে অশোধিত তেলের দামও কম ছিল। কিন্তু কেন্দ্র বাড়তি কর চাপানোয় তার ফায়দা আমজনতা পায়নি। এখন মোদী সরকার শুল্ক কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দিতে নারাজ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পি চিদম্বরমরা একে ‘করের মাধ্যমে তোলাবাজি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘মোদী মিত্র’-দের ফায়দার জন্যই মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে।