একদিকে যখন ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে লাগাতার বেড়ে চলেছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। তখন অন্যদিকে অগ্নিমূল্য হয়েছে সর্ষের তেলও। এর পাশাপাশি উৎসবের মরসুমে এবার পেঁয়াজ, টোম্যাটোর দাম যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তা নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মধ্যবিত্তের মনে। যদিও মোদী সরকারের দাবি, দাম তো গত বছরের তুলনায় কমই! অথচ সরকারি হিসাবই বলছে, গত অক্টোবরের তুলনায় এখন কলকাতার বাজারে পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, কলকাতায় বিশেষত টোম্যাটোর দাম অন্যান্য শহরের তুলনায় বেড়েছে অনেক বেশি। গত বছর ১৪ অক্টোবর প্রতি কিলোগ্রাম টোম্যাটোর দর যেখানে ৫০ টাকা ছিল, সেখানে এ দিন তা ৯৩ টাকা! পেঁয়াজও গত বারের থেকে বেশি। মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই এই দুই আনাজের দাম বেড়েছে লাফিয়ে।
এই দুইয়ের দরে মরসুমি ওঠা-নামা তো থাকেই। কিন্তু তার সঙ্গে এ বার এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পিছনে আরও দু’টি কারণ রয়েছে বলে কৃষি অর্থনীতিবিদদের অভিমত। এক, অসময়ে বৃষ্টির ফলে আনাজের জোগান ধাক্কা খেয়েছে। দুই, রাজ্যে লিটারে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই ডিজেলের দৌলতে পরিবহণের খরচও বেড়েছে অনেকখানি। আর এই দুইয়ের কারণে শুধু পেঁয়াজ বা টোম্যাটো নয়, আগুন দরে বেগ দিচ্ছে অনেক আনাজই। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো পেঁয়াজ, টোম্যাটো উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে অসময়ে বৃষ্টির ফলে ফসল নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিজেলের দামও সমস্যা তৈরি করেছে। আনাজের জোগানদার সংস্থাগুলি বলছে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক মালিকেরা পরিবহণের জন্য চড়া দর হাঁকছেন। তা জোগাতে গিয়ে অগ্নিমূল্য আনাজের।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার কেন্দ্রীয় খাদ্য, গণবণ্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, আলু, পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার জন্য আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকেই সরকার সক্রিয়। রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের গুদাম থেকে ২১ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে পেঁয়াজ কিনে বাজারে বিক্রির বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আলু ও টোম্যাটোর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে মোদী সরকারের দাবি। কিন্তু সরকার এ কথা বললেও, এশিয়ার বৃহত্তম ফল ও আনাজের পাইকারি বাজার, দিল্লির আজাদপুর মান্ডির ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, খুব তাড়াতাড়ি টোম্যাটো, পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, ডিজ়েলের চড়া দর। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে টোম্যাটো ৩০-৪০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হলেও, ট্রাকে চেপে দিল্লী আসতে-আসতে তার দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।