দুর্গাপুজো চলাকালীন বাংলাদেশে ঘটে গেছে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা। একাধিক মন্দির ও মণ্ডপে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে বেশ কয়েকজনের। ওপার বাংলার এহেন ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল এপার বাংলার তৃণমূল ও সিপিএম। শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদকীয়তে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। পাশাপাশি, এই বিষয়ে শেখ হাসিনার পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় তারা। এমনকি নরেন্দ্র মোদী সরকারকে এই বিষয়ে মুখ খোলার আর্জি জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, শনিবার বাংলাদেশের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রেস বিবৃতি দিয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সিপিএমের তরফে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে শতাব্দী ধরে ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে এই উৎসব পালন হয়ে আসছে। এই ঐতিহ্য ভবিষ্যতে বজায় থাকবে ও আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা যায়।’
ঘটনার সূত্রপাত, ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি পুজো মণ্ডপে কোরান পাওয়াকে কেন্দ্র করে। এরপরই একের পর এক জায়গায় এহেন হিংসার ঘটনা সামনে আসে। এমনকি এই পুরো ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। জোর তদন্তে এখনও পর্যন্ত ৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এরপরেও দেশের একাধিক জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং কক্সবাজারের পেকুয়ায় বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও নোয়াখালির এক ইসকন মন্দিরেও শুক্রবার হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দু’জনের মৃত্যু ঘটেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, এই একই সুরে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে ভারত সরকারের কথা বলার দাবি জানিয়েছিলেন। টুইটে তিনি লিখেছিলেন, “বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর উপর আঘাত ও অশান্তির গুরুতর অভিযোগ আসছে। এটা উদ্বেগের। অভিযোগের তদন্ত হোক। ঘটনাক্রম সত্যি হলে বাংলাদেশ সরকার ব্যবস্থা নিক। ভারত সরকার অবিলম্বে কথা বলুন। আমরা ভারতে যেমন সংখ্যালঘু সুরক্ষার পক্ষে, তেমনই বাংলাদেশেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিত চাই।”
তৃণমূলের তরফে বাংলাদেশের ঘটনায় এপার বাংলার তরফে শুক্রবার প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি, এই ঘটনা নিয়ে অবিলম্বে ভারত সরকারের মতামত জানানো উচিৎ বলেও দাবি করে ‘জাগো বাংলা’।
সিপিএম বাংলাদেশের হিসাত্মক ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। ঘটনার উদ্বেগ প্ৰকাশ করে সিপিএমের তরফে বলা হয়, হিংসার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত সেনা মোতায়েন করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে সরকারের তরফে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই চেষ্টা করবে বাংলাদেশ সরকার।
সবমিলিয়ে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ধর্মনির্বিশেষে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক দেশে এইরকম ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান তিনি। হাসিনার এহেন পদক্ষেপে খুশি তৃণমূল ও সিপিএম।
বিশ্বাসের নিরিখে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদের সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ভারতের মানুষের মধ্যে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে মেরুকরণ করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয় ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদকীয়তে। বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারতে সার্বভৌমত্ব ও সততার পক্ষে। ভারতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার পক্ষে আমরা। এটা বাংলাদেশের পক্ষেও প্রযোজ্য। সেখানেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বজায় রাখা উচিৎ।’