দশমী পার হয়ে গেলেও এখনও কাটেনি দুর্গাপুজোর রেশ। তার আগেই তিস্তার অপর পারের বাসিন্দারা মেতে উঠল একদিনের দুর্গাপুজোয়। প্রতিবছরই একাদশী তিথিতে ময়নাগুড়ি, কোচবিহার সহ রাজবংশী অধ্যুষিত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ভান্ডানী পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত দেবী দুর্গাই এই তিথিতে ভান্ডানী রূপে পূজিত হন। কথিত আছে, বৈকণ্ঠপুর রাজবাড়ি ছেড়ে দেবী দুর্গা তাঁর সন্তানদের নিয়ে কৈলাশে ফেরার সময় ঘন জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি সাধারণ নারীর রূপ ধরে ঘন জঙ্গলের ভেতর একটি গাছ তলায় বসে কাঁদছিলেন।
সেই থেকে পাঁচ শতাধিক বছরেরও বেশি সময় ধরে ময়নাগুড়ি সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় একাদশী তিথিতে ভান্ডানী রূপে দেবী দুর্গার একদিনের পুজো হয়ে আসছে। এখানে দেবী মহিষাসুর মর্দিনী নন। সাধারন এক নারী। সিংহের বদলে বাঘের উপর অধিষ্ঠিতা। সঙ্গে থাকেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ।
প্রতিবছর এই পুজোকে ঘিরে ময়নাগুড়ির ভান্ডানি এলাকায় লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। রাতভর চলে পুজো এবং মেলা। সঙ্গে বলি হয় কয়েকশো পাঁঠা এবং পায়রা। তবে চলতি বছর হাইকোর্ট ও রাজ্য সরকারের করোনা সংক্রান্ত বিধি মেনে পুজো হওয়ায় মেলা বন্ধ। তবুও তার মধ্যে কোনওরকম অশান্তি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ ও র্যাফ।
ঐ সময় এক রাখাল গরু চড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মেয়েটিকে একা জঙ্গলে বসে কাঁদতে দেখে রাতে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেন। এরপরই মাঝরাতে দেবী আসল মূর্তি ধারণ করেন। রাত্রিবেলা আশ্রয় দেওয়ার জন্য রাখালকে বর চাওয়ার আদেশ দেন তিনি। রাখাল বলেন, ঘন জঙ্গলে চাষ করতে পারেনা কেউই।
তাই খাদ্যাভাবে ভুগতে হয়। তাই গোটা এলাকাকে শষ্য শ্যমলা করে দেওয়ার বর চান তিনি। রাখালের কথা শোনামাত্রই দেবী তুষ্ট হয়ে বর দেন। পরদিন সকাল থেকেই তিস্তার ওপারের এলাকা শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে। তখন রাখাল সম্প্রদায়ের লোকেরাই মায়ের পুজো শুরুর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।