করোনা অতিমারির মধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের মরশুম। আর তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় বিশেষজ্ঞেরা। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চোরাস্রোত এখনও বইছে স্বজনহারা বহু পরিবারে। আর তারই মধ্যে জনস্রোত নামছে রাস্তায়। ইতিমধ্যে ১৩৯ কোটির দেশকে ভাইরোলজিস্ট ডব্লিউ ইয়ান লিপকিনের সতর্কবার্তা— করোনা-যুদ্ধে ভারত এখনও ‘বর্মহীন’।
প্রসঙ্গত, মোট টিকাকরণের হিসেবে বিশ্বের বহু দেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে ভারত। ২৬ কোটি ৬৪ লক্ষ বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ (দু’টি টিকা) হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ১৩৯ কোটির দেশে তা যে কিছুই নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট লিপকিন। তাঁর সাবধানবাণী, যে ভাবে ভারতে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে, করোনা-বিধি লঘু করে দেওয়া হয়েছে, তা কোনও ভাবেই নিরাপদ নয়।
একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থার অনুষ্ঠানে লিপকিন জানান, পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা। ভারতের জন্য তা গর্বের। টিকাকরণে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভারতের বিপুল জনসংখ্যার ভারে টিকাকরণের শতকরা হিসেব খুবই কম।
তাঁর দাবি, ‘আপনাদের দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশেরও কম টিকাকরণ হয়েছে। তা ছাড়া, জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ এখনও প্রাপ্তবয়স্ক নয়। ১৮ বছরের নীচে এই অংশের টিকাকরণে ছাড়পত্র দেয়নি সরকার। যার অর্থ, দেশে লকডাউন তুলে দেওয়ার জন্য যে ‘বর্ম’ প্রয়োজন, তা আপনাদের কাছে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে তো কেউ কথাই বলছে না। আমার বিশ্বাস, এর কিন্তু ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে।’
লিপকিনের বক্তব্য, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে অনেকেই নানা ধরনের জটিল সমস্যায় ভুগছেন। সেই সমস্যাগুলি কখনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করছে। কখনও আবার চিরস্থায়ী ক্ষতি করে দিচ্ছে। অন্য কোনও জটিল অসুখে শারীরিক ভাবে দুর্বল ব্যক্তিই যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা কিন্তু নয়। যাঁরা কোভিডে সামান্যই ভুগেছেন, দেখা যাচ্ছে তাঁদেরও নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আতঙ্কের বিষয় এই সংখ্যাটা মোট সংক্রমিতের প্রায় ৩০ শতাংশ।’
ভয়ের কারণ আরও বিশদ ব্যাখ্যা করে প্রবীণ ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘হঠাৎ কোনও জাদুবলে যদি করোনাভাইরাস বিলুপ্তও হয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত এই মানুষগুলো কিন্তু শারীরিক জটিলতা নিয়েই থেকে যাবেন এবং ভবিষ্যতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আগামী কয়েক দশক হয়তো এর জন্য ভুগতে হবে আমাদের সকলকে।’