ঘোষিত হল ২০২১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজেতাদের নাম। প্রতি বছর ছ’টি ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। বরাবরই সবচেয়ে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার। এবছরের নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেন দুই সাংবাদিক। বাক স্বাধীনতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য ফিলিপিন্সের সাংবাদিক মারিও রেসা এবং রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভকে এই সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। শুক্রবার তাঁদের নাম ঘোষণা করেন নোবেল কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল থমাস পার্লম্যান।
এদিন নোবেল কমিটির তরফে জানানো হয়, গণতন্ত্রের প্রথম বিষয় হল বাক স্বাধীনতা। দীর্ঘ শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রেও বাক স্বাধীনতার প্রয়োজন। আর সে বিষয়েই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন ফিলিপিন্স ও রাশিয়ার এই সাংবাদিকদ্বয়। ক্ষমতার প্রদর্শন, মিথ্যাবাণী এবং প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়েছে তাঁদের অবাধ, স্বাধীন ও নির্ভীক সাংবাদিকতা। গোটা বিশ্বের মানুষকে সমস্ত সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এমনই মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হওয়া হিংসা, যুদ্ধ এবং সংঘাতের আবহে মারিয়া রেসা এবং দিমিত্রি মুরাতভ মানুষের তাঁদের কাজের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার রক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন।
উল্লেখ্য, রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি আন্দ্রেভিচ মুরাতভ রাশিয়ান সংবাদপত্র নোভায়া গেজেটার মুখ্য সম্পাদক পদে রয়েছেন। ১৯৯৩ সালে রাশিয়া জুড়ে তৈরি হওয়া চরম গণতান্ত্রিক সংকটকালে দিমিত্রি বাক স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক স্বাধীন সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নাম। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলির মধ্যে নোভায়া গেজেটা তথ্য নির্ভর সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়েছে। রুশ সমাজের এমন অনেক দিক এই সংবাদপত্রে তুলে ধরা হয়েছে, যা অন্য প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়নি। এমনটাই মত নোবেল কমিটির। জানা গিয়েছে, সংবাদপত্রটির শুরুর দিন থেকে এখনও পর্যন্ত ছয় জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। টার্গেটে রয়েছেন আরও বহু। একাধিকবার খুনের হুঁশিয়ারির পরও মুখ্য সম্পাদক দিমিত্রি তাঁর অবস্থান থেকে এক ফোটা সরে দাঁড়াননি। স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ ছাড়ার প্রলোভন থাকা সত্ত্বেও তিনি রাজি হননি। সাংবাদিকদের মৌলিক অধিকার নিয়ে তিনি সর্বদা সরব হয়েছেন।
অন্যদিকে ফিলিপিন্সে শাসকের রক্তচক্ষুর সামনে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার জন্য সরব হয়েছেন মেরিয়া রেসা। যেখানে হিংসা এবং ক্রমবর্ধিষ্ণু কর্তৃত্ববাদই শেষ কথা, সেখানে ২০১২ সালে মারিয়া প্রতিষ্ঠা করেন র্যাপলার নামে একটি ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যেটি মূলত ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিসম নির্ভর। বাক স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে মারিয়া তাঁর অসমসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্টের আমলে বিতর্কিত মাদক কাণ্ড নিয়ে র্যাপলারের কভারেজ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।