ফের তরতরিয়ে চড়ল ডিজেলের দাম। একে করোনা সংক্রমণ, সঙ্গে ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। ফলত এ বছর দুর্গা প্রতিমা দর্শনের জন্য আয়োজিত পুজো পরিক্রমা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাংলার পরিবহণ নিগম। সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে দশমীর দিন লঞ্চে গঙ্গাবক্ষে বিসর্জন দেখানোর আয়োজনও। গত বছর করোনা সংক্রমণের সময়েও পুজোর সময় পরিবহণ নিগম বাসে, ট্রামে কলকাতায় ঠাকুর দেখার আয়োজন করেছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগে সে ভাবে সাড়া দেননি কলকাতাবাসী। যাত্রীসংখ্যা তেমন বেশি না হওয়ায় বিস্তর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল পরিবহণ নিগম। দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ওই সময় মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ঠাকুর দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ফলে ব্যবসায়ীক উদ্যোগের জন্য খরচটুকুও তোলা সম্ভব হয়নি। তাই এ বার অনেক ভাবনা চিন্তা করেই পরিবহণ নিগম ঠাকুর দেখানোর যাবতীয় উদ্যোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২০১৯ সালে পুজোয় রাজ্য পরিবহণ নিগম বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে বড় করে পুজো পরিক্রমার আয়োজন করেছিল।
সেবার বিলাসবহুল বাসে, ট্রামে শহর ও শহরতলির ঠাকুর দেখানোর পাশাপাশি বনেদি বাড়ির পুজো দেখার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল। এমনকি জয়রামবাটির কুমারী পুজো দেখানোর পাশাপাশি ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিল পরিবহণ নিগম। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে টাকির ইছামতী নদীতে বিসর্জন দেখানোর ব্যবস্থাও করেছিল নিগম। দু’বছর আগে এই প্যাকেজ কেন্দ্র করে ২১ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছিল পরিবহণ নিগম। কিন্তু গত বছর সেই উদ্যোগ মাঠে মারা গিয়েছিল করোনা সংক্রমণের জেরে। কোভিড সংক্রমণের ফলে আর্থিক অবস্থা এখনও ফেরেনি পরিবহণ নিগমের। তার সঙ্গেই এ বার যুক্ত হয়েছে ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। পরিবহণ নিগম হিসেব-নিকাশ কষে দেখেছে, এ বার পুজো পরিক্রমার আয়োজন করতে গেলে তার খরচ হবে অনেক বেশি। কিন্তু এমন আয়োজন করে যে লাভের মুখ দেখা যাবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না পরিবহণ নিগমের কোনও উচ্চপদস্থ কর্তা। তাই এ বছরের মতো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুজো পরিক্রমা। এপ্রসঙ্গে পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেছেন, “ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও পরিবহণ দফতর ভাড়া বাড়াতে পারেনি।
যা নিয়ে এমনিতেই চাপে রয়েছে পরিবহণ নিগম। আবার নতুন করে বাড়তি খরচ গুণতে হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ফলে আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যেতে পারে পরিবহণ নিগম। তাই সব দিক বিবেচনা করেই পুজো পরিক্রমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” নবান্ন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গত বছরের মতো এ বারও হবে না দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। তা ছাড়া কলকাতা হাইকোর্ট তার পুরনো নির্দেশ বহাল রেখে জানিয়ে দিয়েছে মণ্ডপে ঢুকে ঠাকুর দেখা যাবে না।