ইতিহাস, আভিজাত্য, বনেদিয়ানায় – এই তিনে সমৃদ্ধ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির পুজো। আজও তা অমলিন। নিয়মনিষ্ঠা মেনে প্রতি বছর হয়ে আসছে এই পুজো। এ বছর এই বনেদি পুজো ৩৫৬তম বছরে পা দিয়েছে। চম্পাহাটির সাউথ গড়িয়ার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো এলাকায় বিখ্যাত। তার বহু কারণও রয়েছে অবশ্য।
প্রতি বছর এই পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের সময় বন্দুক থেকে দুটো ফাঁকা গুলির আওয়াজ করা হয়। মায়ের স্বর্গে প্রত্যাবর্তনের আগাম বার্তা পৌঁছে দিতে ছাড়া হয় এক বিশেষ ধরনের পাখিও। এছাড়াও পুজোর তিনদিন ধরে ছাগ বলির প্রচলনও রয়েছে এই পুজোতে। এলাকায় এই জমিদার বাড়ির প্রতিমা প্রথম নিরঞ্জনের পরেই অন্যান্য পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের চল আজও বহাল রয়েছে।
জমিদার পরিবারের তরফে বর্তমান বংশধর এবং ট্রাস্টির অছি পরমজিৎ বন্দ্যোপাধায় জানান, তাঁদের পূর্ব পুরুষ মুঘল সাম্রাজ্যে খাজাঞ্চি হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর নাম ছিল রামকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনিই ১৬৬৫ সালে এই পুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর জমিদারি ছিল জয়নগরের দক্ষিণ বারাসাত এলাকায়। আর কাছারি বাড়ি ছিল সাউথ গড়িয়াতে। তিনি এখানে এসে জমিদার বাড়ি তৈরি করেন। তারপর ঠাকুর দালান তৈরি করে শুরু করেন দুর্গাপুজোও।
পরমজিৎ বন্দ্যোপাধায় আরোও জানান, যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ই এই পুজোয় বেশ কিছু নতুনত্ব এনেছিলেন। তাঁর আমলেই এই পুজোর জন্য ট্রাস্ট তৈরি করা হয়। সাউথ গড়িয়া পুলিনবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় জয়েন্ট এস্টেট দেবত্তর ট্রাস্ট।
এই ট্রাস্টের তরফে যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর বংশধররা বর্তমানে এই পুজো পরিচালনা করেন। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বংশের জ্যেষ্ঠ বংশধর মেডিক্যাল কলেজের অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান প্রখ্যাত চিকিৎসক স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বেই এ বছরও করোনা বিধি মেনে পুজো হচ্ছে।
পরবর্তী সময়ে তাঁর উত্তরসূরী যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের কালেক্টর। তাই তদানীন্তন ইংরেজ সরকারের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ছিল। তাঁরা জমিদার বাড়ির পুজোতে আসতেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লর্ড হেস্টিং। তিনি অনেক বার সস্ত্রীক জমিদার বাড়ির এই পুজোতে এসেছেন।