মোট ৩ কেন্দ্রে নির্বাচন হলেও গোটা রাজ্য তথা দেশের নজর ছিল ভবানীপুরের দিকেই। কারণ উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের তরফে প্রার্থী ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদি প্রার্থী, তাই রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণার দিন থেকেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লড়ে যাচ্ছিলেন দিদির ভাইয়েরা। দিদির নির্দেশেই ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলেন দলের তাবড় তাবড় নেতারা। তাঁদের কেউ মন্ত্রী, কেউ বিধায়ক, আবার কারও সঙ্গে দিদির রক্তের সম্পর্ক। অবশেষে প্রত্যাশামতই রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুরে হ্যাটট্রিক করেছেন। একইসঙ্গে ভাইয়েদের রিপোর্ট কার্ডেও বেড়ে গিয়েছে অনেক নম্বর।
পাঁচ মাস আগে যখন ভবানীপুরে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় লড়াই করেছিলেন তখন তাঁর জেতার মার্জিন ছিল ২৮ হাজার ৭১৯ ভোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মার্জিন সেখানে ৫৮ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। এই ব্যবধান অন্য কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। তা হল, এবার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল অনেক কম। ৫৭ শতাংশের কিছু বেশি। কম ভোট পড়া সত্ত্বেও দিদির মার্জিনে রেকর্ড হয়েছে। তা ছাড়া, শোভনদেব জিতলেও কাঁটা থেকে গিয়েছিল দুটি ওয়ার্ড। ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড। এই দুই ওয়ার্ডেই পিছিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এবার দুই ওয়ার্ডেই লিড নিয়েছেন মমতা।
প্রসঙ্গত, চেতলার কর্মীসভা থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। পাঁচ মাস আগে শোভনদেববাবু এই ওয়ার্ডে লিড পেয়েছিলেন ৪১৩ ভোটে। এবার তা পৌঁছেছে দু’হাজার ৩৬৬ ভোটে। সুব্রত পাঁচ মাসে মার্জিন বাড়িয়েছেন পাঁচ গুনেরও বেশি। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে দিদি ভরসা রেখেছিলেন দেবাশিস কুমারের ওপর। রাসবিহারীর বিধায়ক কার্যত এই ওয়ার্ডে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। কারণ এই ওয়ার্ডে শোভনদেব পিছিয়েছিলেন দু’হাজারের বেশি ভোটে। অবশেষে দেখা গেল, দেবাশিস দু’জাহার ভোটে পিছিয়ে থাকার কাঁটা তুলে মমতাকে দেড় হাজারের বেশি ভোটে লিড পাইয়ে দিয়েছেন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সিকে ৭২ নম্বর ওয়ার্ড সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেত্রী। দেখা গিয়েছে এই ওয়ার্ডেও তাঁর লিড সাড়ে তিন হাজারের বেশি। আবার, প্রায় সাড়ে পাঁচশ ভোটে পিছিয়ে থাকা ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে দিদি তিন স্ট্রাইকার ফর্মে দল সাজিয়েছিলেন। তাঁরা হলেন, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। উপনির্বাচনের ইভিএম খুলতে দেখা গেল, পিছিয়ে থাকা ৭৪-এ তৃণমূলনেত্রী লিড পেয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার।
ফিরহাদকে আরও দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্বও দিয়েছিলেন মমতা। তার মধ্যে ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে শোভনদেবের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৫ শতাংশ। তাতে তিনি লিড পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৩৭৯ ভোটে। এবার সেই ৭৭ নম্বরে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের সামান্য বেশি। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, তা সত্ত্বেও মমতার মার্জিন বেড়েছে। শোভনদেবের থেকে ৩০০-র বেশি ভোটে লিড পেয়েছেন তিনি। ফিরহাদের নিজের ওয়ার্ড ৮২ নম্বরও তৃণমূল নেত্রীকে ঢেলে লিড দিয়েছে। শোভনদেবের বেলায় যা ছিল হাজার পাঁচেক তা এবার ১২ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে।
মমতার বাড়ির ওয়ার্ড ৭৩ নম্বরে দায়িত্বে ছিলেন নিজের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের ভাইয়েদের মতো নিজের ভাই কার্তিকও দিদির পাশে লিখে দিয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি লিড। অন্যদিকে, মমতা আগেই বলে দিয়েছিলেন, মদন সব জায়গাটাই একটু একটু করে দেখবে। তাই নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্ব না থাকলেও মদন মিউজিক ভিডিও করেছেন, তসরের পাঞ্জাবি পরে বাসযাত্রীদের মধ্যে দিদির হয়ে ভোট চেয়ে গোলাপফুল দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দিদির রেকর্ড জয়ে যে ভাইদের রিপোর্ট কার্ডের নম্বরও বেড়েছে, তা বলাই বাহুল্য।