প্রথমত, গত বিধানসভা নির্বাচনেই ভবানীপুরে বড় ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল। তার ওপর উপনির্বাচনে আবার প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট পরার হারও সন্তোষজনক নয়। তাই জেতার আশা নয়, বরং কত ভোটের ব্যবধানে পরাজয়, এখন তার অঙ্কই কষছে বিজেপি শিবির। রবিবার ভবানীপুরের সঙ্গে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে চলা শামসেরগঞ্জ কিংবা জঙ্গিপুর নিয়েও দল আশাবাদী নয়। কারণ মুর্শিদাবাদে না আছে সংগঠন, না ছিল হাওয়া। ফলে রবিবারের ফল যে ৩-০ হতে চলেছে তার জন্য অন্তত মানসিক ভাবে প্রস্তুত বিজেপি।
দলের রাজ্য নেতাদের প্রায় সকলেই মনে করছেন বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় উপনির্বাচনে জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে নেবে তৃণমূল। মমতা জিততে পারেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার ভোটে। ভোট প্রচারে যাই বলা হোক না কেন ভবানীপুর যে দলের জন্য কঠিন ঠাঁই, তা মানছেন রাজ্য নেতারা। এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘আসলে উপনির্বাচন যখন রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় কোনও পরিবর্তন আনতে পারবে না বলে বোঝা যায়, তখন সাধারণ ভোটাররা চিন্তা কম করেন। এমন কী ভোট দিতেও সে ভাবে আগ্রহ দেখান না। সেটা পরিসংখ্যানই বলে দেয়।’ এই বক্তব্য যে অনেকাংশেই ঠিক, তার উদাহরণ আগেই দেখিয়েছে ভবানীপুর।
২০১১ সালেও এই আসনে উপনির্বাচনে জিতেছিলেন মমতা। সে বার নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সী যখন জিতেছিলেন, তখন এই আসনে ভোট পড়েছিল ১,৩৫,৭৪১টি। যা মোট ভোটারের ৬৩.৭৮ শতাংশ। পরে মুখ্যমন্ত্রী যখন উপনির্বাচনে প্রার্থী হলেন, তখন সেটা কমে হয়ে যায় ৯৫,০৬৪ অর্থাৎ ৪৪.৭৩ শতাংশ। মানে ১৯.০৪ শতাংশ কম। আবার ২০১৬ সালে মমতা যখন জিতলেন তখন ভোট পড়ে ১,৩৭,৪৭৫। মোট ভোটারের ৬৬.৮৩ শতাংশ। গত এপ্রিল মাসে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যখন জিতলেন, তখন ভোট পড়েছিল ১,২৭,৫৩৬। মানে ৬১.৭৯ শতাংশ। আর এবার পড়েছে ৫৭ শতাংশের একটু বেশি।
বিজেপি নেতারা মুখে না বললেও একান্ত আলোচনায় স্বীকার করছেন, প্রচারে উত্তাপ ছড়ানো গেলেও ভবানীপুরে ভোট করাতে পারেনি দল। বহুতলের বাংলাভাষী নন এমন বাসিন্দাদের ভোটের লাইনে দাঁড় করিয়ে জয় পেতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘ভবানীপুর এলাকায় একটা বড় অংশের মুসলিম ভোটার রয়েছেন। তাঁদের ভোট ইভিএম বন্দি হলেও হিন্দু ভোটকে সে ভাবে একত্রিত করা যায়নি। ফলে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বাড়তে পারে। শোভনদেব জিতেছিলেন ২৮,৭১৯ ভোটে। এ বার মমতা তা টপকে যেতে পারেন।’