ভবানীপুরে ভোট দানের হারকে কেন্দ্র করেই যাবতীয় হিসেব নিকেশ চলছে তৃণমূল এবং বিজেপি শিবিরে৷ ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল জিতবেন, অর্জুন সিং-এর মতো দু’ একজন ছাড়া এমন দাবি বিজেপি-র তরফেও সেভাবে কেউ করেননি৷ কারণ বিজেপি শিবিরেরও প্রথম লক্ষ্য ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর জয়ের মার্জিন যতখানি সম্ভব কমিয়ে আনা৷ আবার তৃণমূলের লক্ষ্য ঠিক উল্টো৷ শুধু মুখ্যমন্ত্রীর জয় নয়, শাসক দলের লক্ষ্য জয়ের মার্জিন যতটা সম্ভব বেশি রাখা৷
নির্বাচন কমিশনের তরফে যে তথ্য পাওয় যাচ্ছে, তাতে বৃহস্পতিবার ভবানীপুরে ভোট পড়েছে ৫৭ শতাংশের কিছু বেশি৷ কয়েক মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে এই হার ছিল ৬১ শতাংশের সামান্য উপরে৷ ভবানীপুরে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জিতেছিলেন ২৮ হাজারের বেশি ভোটে৷
গত কয়েকটি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা, ভবানীপুরে ভোট দানের হার বাড়লে তৃণমূলের জয়ের মার্জিন কমে৷ ২০১১ সালের উপনির্বাচনে ভবানীপুরে ভোট দানের হার ছিল ৪৪ শতাংশ, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান ছিল ৫৪ হাজারের বেশি৷ আবার, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যখন ভোট দানের হার যখন ৬৬ শতাংশ ছিল, তখন ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়লে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ২৫ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে থেকেছে৷
অতীতের এই পরিসংখ্যান দেখেই বিজেপি-র অঙ্ক, বিধানসভা নির্বাচনের কাছাকাছি ভোট পড়লে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর জয়ের মার্জিন হয়তো বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধানের কম হতেও পারে৷ আর সেটা হলেই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নৈতিক জয়ের দাবি তুলতে পারবে৷
অন্যদিকে তৃণমূলও শুরু থেকেই ভোটদানের হার বাড়ানোর জন্য ভবানীপুরে তৎপর ছিল৷ তাদের আবার পাল্টা যুক্তি ছিল, ভোটদানের হার কমলে সুবিধা পাবে বিরোধীরা৷ ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবারও টুইট করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা৷ যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নালিশও জানিয়েছে বিজেপি৷ সকালের দিকে ভোট দানের হার কম থাকলেও বেলার দিকে ভোট দানের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় দৃশ্যতই স্বস্তিতে ছিল তৃণমূল শিবির৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, বিধানসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে ভবানীপুরে নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের উপরে আস্থা রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর জয়ের মার্জিন কমানোর অঙ্ক কষছে বিজেপি৷ কিন্তু এবার সেই হিসেব নাও মিলতে পারে৷ কারণ বিজেপি যাই বলুক না কেন, উপনির্বাচনে সরকার বদলের সম্ভাবনা নেই৷ সেক্ষেত্রে বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক থেকেও একটা বড় অংশের ভোট মুখ্যমন্ত্রীর ঝুলিতে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে৷ দিনের শেষে নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে ভবানীপুরে ভোটদানের হার ৬০ শতাংশ পেরোয়নি৷ ফলে শেষ পর্যন্ত কার হিসেব মেলে, সেটাই এখন দেখার৷