আবহাওয়া দফতর আগেই লাল, কমলা এবং হলুদ সতর্কবার্তা জারি করেছিল। সেই পূর্বাভাস মতই নিম্নচাপের বৃষ্টিতে হাবুডুবু অবস্থা কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির। প্রবল বর্ষণের জেরে দুই পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরের বহু জায়গা জলের তলায় চলে গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় পিন্ডরুই এলাকায় জলে ডুবে কার্তিক মাইতি (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাকসি, চন্ডিয়া নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। অন্য দিকে, ডেবরায় জল তেমন না বাড়লেও বেশ কিছু গ্রাম এখনও জলমগ্ন। ঝুমি এবং শিলাবতী নদীর জল বাড়তে থাকায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ঘাটালে।
পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া পুরসভার একাধিক এলাকায় জমে থাকা জল কিছুটা কমলেও গ্রামের দিকে জল জমে রয়েছে এখনও। পুরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় এখনও জমা জলে ভোগান্তির শিকার বাসিন্দারা। একই অবস্থা ভগবানপুর, এগরা, পটাশপুরেও। কেলেঘাই নদীর জল উপচে গ্রামে ঢুকছে।
তবে নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যাওয়ায় গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলাগুলিতে আপাত স্বস্তি মিললেও আশঙ্কা বাড়ছে পশ্চিমের জেলাগুলিতে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানে বৃহস্পতিবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দু’দিনের বৃষ্টিতে এমনিতেই চার দিকে জল থইথই। বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদীগুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
এখনও আগের জল শুকোয়নি অধিকাংশ জায়গায়, তার মধ্যে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে বৃহস্পতিবার আরও জল ছাড়ায় দিশাহারা বর্ধমান, হাওড়া, হুগলির নিচু এলাকাগুলির মানুষ। ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। তা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর।
রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া জেলায়। সেচ দফতরের আধিকারিক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আসানসোলে বৃষ্টি হয়েছে ৩৮৫ মিলিমিটার। যা সত্তরের দশকের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
আসানসোলের রেলপার, দিলদারনগর, চেলি ডাঙ্গা, নিয়ামতপুর, রানিগঞ্জ, বার্নপুর-সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। শিল্পাঞ্চলের মাঝ বরাবর যে দু’টি নদী রয়েছে গাড়ুই এবং নুনিয়া, সেগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
অন্য দিকে, দুর্গাপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২২০ মিলিমিটার, পুরুলিয়াতে ১৭৫ মিলিমিটার, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে ৩৭১ মিলিমিটার, কাঁটাবাঁধে বৃষ্টি হয়েছে ২৬৫ মিলিমিটার। রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া জেলাতেও। এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী-সহ সব নদীর জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে।
নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয় বাঁকুড়া জেলা জুড়ে। বুধবার সকাল থেকে সেই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে। একটানা প্রবল এই বৃষ্টিতে বুধবার সন্ধ্যার পরেই বিপদ সীমা ছুঁয়ে যায় অধিকাংশ নদীর জলস্তর। সিমলাপালের কাছে শিলাবতী সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে।
আবার শিলাবতী নদীর জলের তলায় ডুবে যায় ভেলাইডিহা সেতু। বাঁকুড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীর জল পাড় ছাপিয়ে প্লাবিত করে বাঁকুড়া বাইপাস ও সংলগ্ন লক্ষ্যাতড়া ও সতীঘাট এলাকা। জল ঢুকেছে পলাশতলা, রামকৃষ্ণপল্লি, অরবিন্দপল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকায়।