বৃষ্টি পড়েই চলেছে অনবরত। কখনও মেঘলা আকাশ, কখনও আবার ঝিরিঝিরি। ঠাকুরের মাথায় প্লাস্টিকের চাপা, কিংবা বাইরে থেকে পড়ি কী মরি করে প্রতিমাকে ছাদের তলায় নিয়ে যাওয়ার হুড়োহুড়ি। প্রতিমা বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত কুমোরটুলির শিল্পী-কর্মীরা। মঙ্গলবার কলকাতার কুমোরপাড়ার ছবিটা এই রকমই।
সময় বাকি মাত্র কয়েকদিন। দরজায় কড়া নাড়ছে ডেলিভারি দেওয়ার সময়। কিন্তু সময়ে সেই ডেলিভারি দেওয়া যাবে কি না সেই চিন্তায় ঘুম নেই কুমোরটুলির শিল্পীদের। নতুন করে যে অর্ডার ঢুকেছে কুমোরপাড়ায় সেই কাজ এখন মধ্যগগনে। মায়ের মূর্তি তৈরি, মাটির কাজ শেষ, কোথাও বাকি রঙের কাজ, আবার কোথাও মায়ের সাজ নিয়ে ব্যস্ততা।
কিন্তু এসবের মধ্যেও চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। সোমবার সারাদিন রোদ থাকলেও মঙ্গলবার সকাল থেকেই মুখ ভার আকাশের। মুষলধারে বৃষ্টি নাহলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়েই চলেছে। আর সেই বৃষ্টিতে মায়ের মাথা বাঁচাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। রোদের আশা ছেড়েই দিয়েছেন তাঁরা।
তাই প্রতিমা শুকাতে এখন উপায় এক মাত্র আগুনের সাহায্য নেওয়া। কোথাও কাঠ কয়লা জ্বালিয়ে কোথাও আবার টিনের মধ্যে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আবার কোথাও গ্যাসের ল্যাম্প জ্বালিয়ে ঠাকুর শুকানোর পালা চলছে কুমোরটুলির গোলাগুলিতে।
মৃৎশিল্পী অমল পাল জানালেন, “বড় কাজগুলো হয়ে গেছে। এখনও অনেক কাজ বাকি। বৃষ্টির জন্য সমস্যায় আছি। সূর্যের তাপ ছাড়া প্রতিমা সাধারণত শোকায় না। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়েই কাঠ কয়লা ডুয়ো ল্যাম্পের ব্যবহার করে প্রতিমা শুকানো হচ্ছে।”
এমনিতেই এবারের বাজার মন্দা, তার ওপর বৃষ্টি। দুইয়ের চোখ রাঙানিতে কাঁপছে কুমোরটুলি। বৃষ্টির ফলে খরচ বাড়ছে। যা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। লাভের পরিমাণও কমবে সব দিক থেকে। শিল্পী দিলীপ পালের কথায়, “এইভাবে ঠাকুর শুকাতে প্রায় ১৫ শতাংশ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি ফ্যান চালাতে হচ্ছে দফায় দফায়। তাতে বিদ্যুতের খরচও বাড়ছে।”
রোদের দেখা কবে মিলবে? শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পিছিয়ে যাচ্ছে তাঁদের। তবে শেষ মুহূর্তে মাটি না রঙ শুকাতে আগুন বা পাখার হাওয়ার ওপরই ভরসা করতে হবে বলেও জানান কুমোর পাড়ার শিল্পীরা।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পাল জানান, “আমাদের এখন অবস্থা খুব খারাপ। ক্ষনিকে ক্ষনিকে বৃষ্টি এসে মাটি করে দিচ্ছে আমাদের সব কিছুই। আগুনে সাহায্যেই শুকানো হবে, নয়তো পাখা চালিয়েই শেষ মুহূর্তের কাজ করতে হবে।” সময়ে ঠাকুর মন্ডপে পৌঁছানোও এখন বড় চ্যালেঞ্জ কুমোরটুলির।
তরুণ শিল্পী সোমনাথ সাউয়ের কথায়, “এই রকম বৃষ্টি আগের বছর বা তার আগের বছরও হয়নি। এই বৃষ্টির জন্য শুধু ঠাকুর তৈরি নয়, রঙ শুকানোর মতো অসুবিধাও হয়।” কুমোরটুলির এক শিল্পী অবিনাশ পালের গলায় হতাশার সুরে। কী করে বাকি কাজ শেষ হবে সেই চিন্তাই মাথায় ঘুরছে তাঁর।