করোনা অতিমারির আগে থেকেই দেশের বেহাল অর্থনীতির পাশাপাশি কাজের বাজারের হাল নিয়ে মোদী সরকারকে ক্রমাগত বিঁধে আসছে বিরোধীরা। সেই আক্রমণের ভিত্তি যে কতটা গভীর, তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল খোদ কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের রিপোর্টে। সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব যে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, তাতে জানানো হয়েছে, গত এপ্রিল-জুনে সারা দেশে নির্মাণ, উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি-সহ ন’টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে (কৃষি বাদে) কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ৩.০৮ কোটি মানুষ। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের আর্থিক সুমারিতে ওই সমস্ত ক্ষেত্রে ২.৩৭ কোটি কাজের কথা বলা হয়েছিল। অর্থাৎ, সাত বছরে ওই ক্ষেত্রগুলিতে কাজ বেড়েছে মোট ২৯ শতাংশ (সবিস্তার সারণিতে)। বছরের হিসাবে মোটামুটি ৪ শতাংশ। সংখ্যার নিরিখে মাত্র ৭১ লক্ষ।
ক্ষমতায় আসার আগে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মোদী তিনি ক্ষমতায় আসার পরে কাজের বাজার তো চাঙ্গা হয়ইনি, উল্টে আরও ঝিমিয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের (এনএসও) ফাঁস হয়ে যাওয়া রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সারা দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশ। যা সাড়ে চার দশকের সর্বোচ্চ। সেই সময়ে মোদী সরকার ওই রিপোর্টটি অসম্পূর্ণ বলে দাবি করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরে সরকারি ভাবে তা প্রকাশ হওয়ার পরে জানা যায়, বেকারত্বের পরিসংখ্যানের বিষয়টি সত্যি। তার পরেও এনএসও-র যে সমস্ত রিপোর্ট মোদী সরকারের বিরুদ্ধেই গিয়েছে। কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কতটা খারাপ তা একাধিক বার ফুটে উঠেছে বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যানেও।
এবার কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে আরও এক বার স্পষ্ট, প্রত্যেক বছর কর্মপ্রার্থীরা যে ভাবে কাজের বাজারে পা রাখছেন, নতুন কাজ তৈরির হার সেই তুলনায় কিছুই নয়। বিশেষ করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার কমে যাওয়া। রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই হার ২৯ শতাংশ। যা ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ৩১ শতাংশ ছিল। এর থেকেই স্পষ্ট, অতিমারির বিরূপ প্রভাব মহিলা কর্মীদের ওপরে পড়েছে বেশি। কেন্দ্রের সাফাই, যে সময়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তখন ছিল লকডাউন (২৫ মার্চ থেকে ৩০ জুন)। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মসংস্থানে ধাক্কা লাগাটাই স্বাভাবিক। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের পাল্টা বক্তব্য, অতিমারির আগে কাজের অবস্থা যদি সত্যিই চাঙ্গা হত, তা হলেও অতিমারির পরের ছবি এতটা হতাশাজনক হওয়ার কথা নয়। উল্টে বাণিজ্য এবং হোটেল-রেস্তরাঁর মতো ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সরাসরি কমে গিয়েছে।
