এবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি থেকে আইনজীবীদের পাঠানো ইমেলে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি-সহ কেন্দ্রের তরফে দেশের ৭৫-তম স্বাধীনতা উদযাপন অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। স্বভাবতই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। একাধিক আইনজীবী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইমেল সিগনেচারের অংশ হিসাবে ওই ছবি ঢোকানো হয়েছে। এতে বিচার বিভাগ ও সরকারের বিভাজনরেখা মুছে গিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত আইনজীবীদের আপত্তিতে শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রির তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে ইমেল পরিষেবার আয়োজন করে যে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস সেন্টার(এনআইসি), তাদের সুপ্রিম কোর্ট থেকে উদ্ভূত ইমেলের ফুটার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরাতে বলা হয়েছে। পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্টের ছবি লাগাতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ পালন করছে এনআইসি।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেটস-অন-রেকর্ড অ্যাসোসিয়েশনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একটি বার্তায় ওই অ্যাড দেখে প্রথম সরব হন এক আইনজীবী। তাতে বলা হয়েছে, “আমি এই নোটিশ পেয়েছি রেজিস্ট্রি থেকে, সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি স্ন্যাপশট। এটা সরকারের অঙ্গ নয়, নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থানের সঙ্গে মানানসই বলে মনে হয় না। বিষয়টি মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে, যদি ঠিক বলে মনে করেন, তবে প্রতিবাদ স্বরূপ উত্থাপন করতে আবেদন করছি।” শীর্ষ আদালতের সেক্রেটারি জেনারেল সঞ্জীব এস কালগাঁওকর এমন ঘটনাবলী তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন। ওদিকে অ্যাডভোকেটস-অন-রেকর্ড অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জোসেফ অ্যারিস্টটল বলেন,আইনজীবীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে।
সর্বোচ্চ আদালতে সওয়াল করার যোগ্যতা আছে, একমাত্র সেই আইনজীবীরাই অ্যাডভোকেটস-অন-রেকর্ডে (এওআর) রয়েছেন। রেজিস্ট্রি আদালতের ব্যাক আপ সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখে, মামলার স্টেটাস নিয়ে এওআরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এনআইসির জনৈক কর্তা জানিয়েছেন, “সব এনআইসির প্ল্যাটফর্মেই এই স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়। আমরা ওটা সুপ্রিম কোর্টের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর ব্যবস্থা করেছি।” ইমেলে বিজ্ঞাপনকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট চন্দ্র উদয় সিং অত্যন্ত আপত্তিকর বলে উল্লেখ করে বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট ও দেশের অন্য আদালতগুলি সরকারি দপ্তর নয়, সরকারি প্রোপাগান্ডার মেশিনারি হিসাবে ব্যবহারের জন্যও নয়।” আরেক আইনজীবী বলেন, “সুপ্রিম কোর্টকে শুধু নিরপেক্ষ হলেই হবে না, নিরপেক্ষ বলে লোকের মনেও হতে হবে। বিচারবিভাগ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের থেকে আলাদা, এই ভাবমূর্তি বজায় রাখতে হলে এসব এড়িয়ে চলতে হবে।”