দেশজুড়ে মহাসমারোহে উজ্জ্বলা যোজনার দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নাম, উজ্জ্বলা ২.০। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “এক কোটি গ্রাহককে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।” অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার মানুষও আশায় ছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। কিন্তু বাস্তবে বাংলা দেখল, মাত্র তিনটি জেলায় গরিবদের উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাদবাকি জেলাগুলি এই একই সুবিধা কেন পাবে না, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই গ্রাহকের কাছে। ধোঁয়াশায় ডিলাররাও। রাজনৈতিক মহলের মতে, এখানেও রাজনীতির খেলা ও মেরুকরণ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, গত কয়েক বছরে বিজেপির রমরমা বাংলার যেখানে যেখানে বেড়েছিল, সেই এলাকাগুলিতেই উজ্জ্বলা প্রকল্প বিলিয়েছে মোদী সরকার।
উল্লেখ্য, মাসের গোড়ার দিকে উজ্জ্বলার দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার দেড় বছর আগে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। সেবার আট কোটি গরিবকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার দাবি করেছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর আগে সমস্ত গ্যাস ডিলারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সম্ভাব্য গ্রাহকদের তালিকা তৈরি করে। এলাকায় আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা যে যে পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে, তার হিসেব রাখার কাজ সেরেও রেখেছিল ডিলাররা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব ডিলারকে উজ্জ্বলা যোজনার সিলিন্ডার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরাজ্যে সেই অনুমতি পেয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও মালদহের ডিলাররা। প্রকল্প চালুর কয়েকদিন পর আবার বাঁকুড়া, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে বাকি তিন জেলায় উজ্জ্বলার কাজ চলছে। অর্থাৎ, বাকি জেলাগুলির গরিব মানুষের যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন, উজ্জ্বলা ২.০ থেকে তারা বঞ্চিত।
এই বৈষম্য প্রসঙ্গে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটবাক্সের সিংহভাগ এসেছিল বলতে জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গ থেকে। কিন্তু তারপর জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা বুঝেছিলেন, প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থ বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই গত বিধানসভা ভোটে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল জঙ্গলমহল। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, বিজেপি বুঝেছে তিন বছর পরের নির্বাচনের জমি প্রস্তুত করতে হলে এখন থেকেই ঝাঁপাতে হবে। আর সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে পজিটিভ ভোটব্যাঙ্ককে। আবার উত্তরবঙ্গে বিজেপি ভালো ফল করলেও মালদহ, ও দুই দিনাজপুরের অনেকটাই কোণঠাসা। ফলে এখানেও এক স্ট্র্যাটেজি। অর্থাৎ দিনের শেষে লক্ষ্য সেই পাহাড় ও জঙ্গলমহল। তাই কেবল ওই দু’টি অঞ্চলেরই বরাতে রয়েছে উজ্জ্বলা।
